পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ হস্টেলের মতোই। দেওয়ালে গ্রাফিক্স, সিঁড়ির পাশে নানা লেখাজোখা। ঘরের মধ্যে চৌকি পাতা। এদিন-ওদিক ছড়িয়ে বই-ব্য়াগ-বিছানার তোষক, চাদর। ৯ অগাস্টের রাতেই এই হস্টেলেই ঘটে গিয়েছিল বিভীষিকাময় ঘটনা। প্রাণ গিয়েছে এক প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার। তারপরেই সামনে এসেছে ব়্যাগিং অভিযোগ। ব়্যাগিংয়ের কারণেই এমন মৃত্য়ু বলে অভিযোগ পরিবারের, ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন পড়ুয়াদের একটি অংশও। যেই হস্টেল ঘিরে এমন ঘটনা সেই হস্টেলের ভিতরেই পৌঁছল এবিপি আনন্দের ক্যামেরা।
৯ অগাস্টের রাত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের চার তলার ১০৪ নম্বর ঘর। এই ঘরেই নাকি জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল যাদবপুরের প্রথমবর্ষের ওই পড়ুয়াকে। সেখানে তাকে দিয়ে জোর করে চিঠি লেখানো হয়। পড়ুয়ার মৃত্যুর পর ওই চিঠি ভাইরাল হয়। সেই চিঠিতে বাংলা বিভাগের এক পড়ুয়াকে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তে উঠে এসেছে যে, ওই ১০৪ নম্বর ঘরে জোর করে চিঠি লেখানোর পরে নীচের ফ্লোরে নিয়ে যাওয়া হয় পড়ুয়াকে। সেখানে তাকে একের পর এক ঘরে ইন্ট্রো দিতে বলা হয় বলে অভিযোগ। তার উপর অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলেছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।
যে ফ্লোরের ব্যালকনি থেকে ওই ছাত্র পড়ে গিয়েছিল, সেই ফ্লোরেই রয়েছে ৬৮ নম্বর ঘর। ওই ঘরেই নদিয়ার ওই পড়ুয়া এসেছিল ৬ অগাস্ট। ঘটনার দিন ১০৪ নম্বর ঘর থেকে তিনতলায় নামানোর পর তার উপর চলে হাড়হিম করা অত্যাচার। হস্টেলের এই তলার ব্যালকনি থেকে পড়ে গিয়েছিল ওই পড়ুয়া।
হস্টেলের ৬৫ নম্বর ঘর নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এই ঘরের বাইরে দরজার উপরে লেখা 'দাদা আসবো?'দরজার উপর লেখা 'এই ঘরে কম'। কোথাও আবার দেওয়ালে লেখা, 'এন্ট্রি আফটার 12 am!' অভিযোগ উঠেছে, সিনিয়রদের এই ঘরে ঢোকার আগে জুনিয়রদের অনুমতি নিতে হতো। অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হত দরজার বাইরে। এই ছবিতেই কি স্পষ্ট যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে সিনিয়র এবং প্রাক্তনীদের একাংশে দাপট চলত?
কে থাকত কোন ঘরে?
পুলিশ সূত্রে খবর, ৯ অগাস্ট রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের মেন হস্টেলের A2 ব্লকের ৩ ও ৪ তলাজুড়ে নারকীয় অত্য়াচারই চলেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, রসায়ন বিভাগের প্রাক্তনী ধৃত শেখ নাসিম আখতার ও সোসিওলজির দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ধৃত মনোতোষ ঘোষ থাকত ১০৮ নম্বর ঘরে। যাদবপুরের কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ধৃত সত্যব্রত রায় থাকত ১১০ নম্বর ঘরে। মহম্মদ আরিফ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকত ৭৪ নম্বর ঘরে। আর ওই ৬৫ নম্বর ঘর ফাঁকাই থাকত।
ব্যালকনির যে অংশ থেকে পড়েছে ওই পড়ুয়া, সেই জায়গাটা ওই ঘর থেকে অনেকটা দূরে। তাহলে এতটা পথ কি ধাওয়া করা হয়েছিল ওই পড়ুয়াকে? উঠছে এমনই প্রশ্ন। ব্যালকনির যে পাঁচিল সেটা ইঞ্চি তিনেক চওড়া। তার উপর দিয়েই নাকি হাঁটানো হত জুনিয়র পড়ুয়াদের। হস্টেলের রাঁধুনির বয়ানে উঠে এসেছে এমনই শিউড়ে ওটার মতো ঘটনার কথা। তাহলে ওই পড়ুয়া কি সেভাবে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল? না কি সে নিজেই লাফ দিয়েছিল? না কি কেউ বা কারা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল? এমনই নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। সেই খোঁজ পেতেই এদিন ডামি ডল নিয়ে তদন্ত চালান তদন্তকারীরা। ব্যালকনির ওই অংশ থেকে ডামি ডল ফেলে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ
আরও পড়ুন: 'একটা ছেলেকে সিপিএমের ইউনিয়ন মেরে ফেলল', ফের মমতার মুখে যাদবপুর প্রসঙ্গ