নীলাচল নিবাসায় নিত্যায় পরমাত্মনে।
বলভদ্র সুভদ্রাভ্যাং জগন্নাথায় তে নমঃ।।
রথৈচ বামনং দৃষ্টা পুনঃ জন্ম ন বিদ্যতে
জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথ গামী ভবতু মে।।
আজ স্নানযাত্রা। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এই উৎসব। ভক্তদের বিশ্বাস এই দিনতেই আবির্ভূত হয়েছিলেন জগন্নাথ দেব। এ নিয়ে স্বাস্ত্রে বহু গল্প প্রচলিত রয়েছে। তারমধ্যে একটি থেকে জানা যায়, প্রথম মন্বন্তরে ব্রক্ষার পুত্র শ্রীস্বায়ম্ভুব মনু একবার পৃথিবীতে পরমেশ্বর ভগবানের দর্শনের অভিলাষে একটি মহাযজ্ঞ করেছিলেন, সেই যজ্ঞের প্রভাবেই শ্রী জগন্নাথদেবের আবির্ভাব। সেই দিনটি ছিল জৈষ্ঠ্যমাসের পূর্নিমা তিথি। সেই থেকেই এই বিশেষ দিনটি স্নানযাত্রা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে তার শুদ্ধিকরণ করা হয়। তারপর ১০৮টি কলসে সেই জল নিয়ে জগন্নাথ বলভদ্র ও শুভদ্রার বিগ্রহকে স্নান করানো হয়। পৌরানিক কাহিনী অনুযায়ী স্নানের পর জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন তাঁরা। শ্রীজগদীশের আজ্ঞানুসারে এই ১৫ দিন শ্রীমন্দিরের দ্বার রুদ্ধ থাকে। এই সময়ে তাঁদের রাজবৈদ্যের চিকিৎসাধীনে গোপনে একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুর্বৈদিক পাঁচনখেয়ে এক পক্ষকাল অর্থাৎ দিন ১৫-র মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তাঁরা। সুস্থ হয়ে উঠেই জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা রাজবেশে সজ্জিত হয়ে রথ করে মাসির বাড়ি গমন করেন। দেশজুড়ে রথযাত্রা হিসেবে পালিত হয় যেই দিনটি।
পুরীতে স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহন বিগ্রহকে জগন্নাথ মন্দির থেকে স্নানবেদীতে বের করে আনা হয়। সেখানে তাদের প্রথাগতভাবে স্নান করানো হয় এবং ভক্তদের দর্শনের জন্য সুন্দর বেশভূষায় সজ্জিত করা হয়। শুধু পুরী নয়। জগন্নাথ দেবের সমস্ত মন্দিরেই এই দিনটি জাঁকজমকে পালিত হয়। এইদিনটিকে পুণ্যতিথিতে বহু মানুষের সমাগম হয়। স্নানযাত্রার আগের সন্ধ্যায় জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহ একটি বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বার করে স্নানবেদীতে এনে রাখা হয়। ভক্তেরা এই সময় চতুর্ধা বিগ্রহ দর্শন করতে আসেন।
৬২৭ বছরে এবারে মাহেশের ঐতিহাসিক রথযাত্রা পরবে। তার আগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো জগন্নাথের স্নানযাত্রা। রবিবা তিথি মেনে সকাল ৯ টায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে মন্দির সংলগ্ন স্নানপিঁড়ির ময়দানে স্নানবেদিতে তোলা হয়। এবার গজ বেশে জগন্নাথ স্নানপিঁড়ির মঞ্চে ওঠেন। সেখানে মোট ২৮ ঘড়া গঙ্গা জল, ও দেড় মন দুধ দিয়ে প্রভুকে স্নান করানো হয়।