রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল সহ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরেও রয়েছে একাধিক ওষুধের দোকান। কিন্তু রাত হতে না হতেই বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত দোকান। মুমুর্ষূ রোগীর জন্য পাওয়া যাচ্ছে না জীবনদায়ী ওষুধ। ফলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শহরাঞ্চলে পালা করে ওষুধের দোকান খোলা থাকুক। এমনটাই আবেদন সাধারণ মানুষের।
ডুয়ার্সের ধুপগুড়ি ব্লক থেকে ময়নাগুড়ি এমনকি জলপাইগুড়িতেও একই ছবি। রাত নটা বাজলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সমস্ত ওষুধের দোকান। এমনকি সরকারি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানেও রাতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ উঠেছে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সামনেই গাড়ি রিজার্ভ করে রাখতে হচ্ছে রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের। যাতে প্রয়োজন হলেই তাঁরা শিলিগুড়ি থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে আসতে পারেন। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের চত্বরেই রয়েছে আরও একটি বেসরকারি নার্সিংহোম। সেখানেও একই ছবি ধরা পড়েছে। কিন্তু কেন রাত হলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সমস্ত ওষুধের দোকান? বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্য়াসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ্ত সাহা বলছেন, 'এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। রাতে আমরা ওষুধের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থাই রেখেছিলাম। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির জন্য তা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, রাতে দোকান খোলা রাখলে অনেক অসামাজিক লোকজন এসে চড়াও হওয়ায় দোকানদারদেরও আতঙ্কে থাকতে হয়। আমরাও চাই রাত বলে যেন কোনও মানুষ তাঁর প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন। প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাবো যাতে রোটেশনালি ওষুধের দোকান খোলা রাখার বিষয়টা তারা দেখে। আর দোকান খোলা রাখলে যে অসুবিধাগুলোর মধ্যে দোকানদারদের পড়তে হচ্ছে, সেদিকেও যাতে তাঁরা নজর দেন।'
এই প্রসঙ্গে, ধুপগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সিংহ বলেন, 'ধুপগুড়ির মানুষের রাতে ওষুধ পেতে সমস্যা হচ্ছে জানি। এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলোতেও অনেক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমাদের কাছে অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন। এটা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর প্রোজেক্ট। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। ওষুধ না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য রাতে ওষুধের দোকান খোলা থাকাটা জরুরি। নিয়মিত যাতে রাতে ওষুধের দোকান খোলা রাখা যায়, সেই ব্যাপারে ধুপগুড়ি পুরসভা উদ্যোগ নিচ্ছে।'
ফালাকাটার এক বাসিন্দা ইলিয়াস ইসলাম। তাঁর স্ত্রী জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলছেন, 'স্ত্রীকে ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু রাতে এখানে কোনও ওষুধের দোকান খোলা পাচ্ছি না। রাত নটা বাজলেই সমস্ত ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে রেখেছি। কখন কী দরকার লাগে তার জন্য যাতে শিলিগুড়ি থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ আনানো যায়। আর্থিক অসুবিধা থাকলেও স্ত্রীর জন্য এটা করতেই হচ্ছে।' ধুপগুড়ি থেকে আসা সুপার স্পেশালিটি হালপাতালের রোগীর পরিজনেরাও একই সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদেরও বক্তব্য একই। এক রোগীর আত্মীয় জানাচ্ছেন, তাঁর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, 'এত বড় একটা হাসপাতাল, তার ফার্মেসি বন্ধ থাকে কিকরে। গোটা জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরের সমস্ত ওষুধের দোকান বন্ধ। শহরের একটাও ওষুধের দোকান খোলা নেই যে প্রয়োজনে সেখান থেকে ওষুধ আনা যাবে। এভাবে তো রোগী বিনা ওষুধেই মারা যাবে!'
স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক, চিকিৎসক সুশান্ত রায় জানাচ্ছেন, জলপাইগুড়ি জেলায় জীবনদায়ী ওষুধ নিয়ে রাতে এর আগেও সমস্যা ছিল। তবুও সেখানে রাতে দু-তিনটে দোকান খোলা থাকতো। কিন্তু তাঁদের কাছে অভিযোগ আসে যে, দোকানে প্রায়ই রাতে বেশ কিছু অসামাজিক লোকজন হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলছে, 'আমি বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাথে কথা বলব। তাদের অনুরোধ করব এর জন্য একটা বড় অংশের মানুষ যাতে অসুবিধায় না পড়ে, সেদিকে দেখার জন্য। পাশাপাশি সরকারি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে কেন প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না, সেদিকেও দেখার অনুরোধ জানাবো।
'
আরও পড়ুন -