রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: রোগীর মৃত্য়ু হয়েছে ২০২১ সালে। কিন্তু তাঁর নামেই ডায়ালিসিসের বিল। চলতি বছরের এপ্রিলেই ওই ব্যক্তির নামে জমা পড়েছে ডায়ালিসিসের বিল। এমনই ঘটনা জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে। অভিযোগ খোদ রোগীর ছেলের। 


জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের ডায়ালিসিস ইউনিটে চিকিত্‍সার জন্য আসা রোগীদের একাংশও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। যদিও অভিযোগের কথা জানেন না বলে জানিয়েছেন জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (CMOH)। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই ডায়ালিসিস সেন্টার পিপিপি মডেলে তৈরি। সেন্টারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।


কার কী অভিযোগ:
রোগীর মৃত্যু হলেও তাঁর নাম ডায়ালিসিসের বিল। আর ডায়ালিসিসের সেই টাকা মেটানো হয়েছে সরকারি কোষাগার থেকে! জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া সুকুমার রায় বলেন, 'আমি নিজেই একজন পেশেন্ট। যে যে পেশেন্টের সঙ্গে ডায়ালিসিস নিয়েছিলাম, তাঁদের অনেকেই এখন মারা গেছে। কিন্তু তাঁদের নামে বিল এখনও হচ্ছে। আমরা এই তথ্য পেয়েছি। এই সংখ্যাটা ৫০ থেকে ১০০ হতে পারে।' জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের মধ্যে PPP মডেলে একটি ডায়ালিসিস সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। দায়িত্বে রয়েছে ব্যারাকপুর মেডিকেয়ার অ্যান্ড রিকভারি সেন্টার বা BMRC। প্রতিদিন এখানে অনেক রোগী ডায়ালিসিস করান। তাতে যে খরচ হয়, সেই বিল মিটিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। এমনই একজন রোগী, জলপাইগুড়ির সুভাষ উন্নয়নপল্লির বাসিন্দা দলবাহাদুর বিশ্বকর্মা। তিনি দার্জিলিং জেলা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত SI ছিলেন। কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ২০২১ সালে তাঁর শেষবার ডায়ালিসিস হয়। ওই বছর ২৩ জুন মৃত্যু হয় তাঁর।  কিন্তু অভিযোগকারীদের দাবি, গত মাসেও তাঁর নামে ডায়ালিসিসের বিল জমা পড়েছে সরকারের ঘরে! এ নিয়ে একটি বিলও দেখিয়েছেন অভিযোগকারীরা। মৃত দলবাহাদুর বিশ্বকর্মার ছেলে প্রভাত বিশ্বকর্মা বলেন, 'বাবা পুলিশে ছিলেন। কিডনির সমস্যা ছিল। ২৩ জুন মৃত্যু হয়। এটার তদন্ত হওয়া উচিত। উনি ২০২১ সালে শেষবার ডায়ালেসিস করা হয়েছিল।কী করে বিল নেয়?' এক রোগীর আত্মীয় সফিকুল রহমান বলেন, 'কিছুদিন আগে পেশেন্ট মারা যায়। তাঁদেরও বিল হচ্ছে। বুঝতে পারছি না, কী করে বিল পাস হচ্ছে। ৬ মাস ধরে হচ্ছে। এখানকার যে ইনচার্জ, শিলিগুড়িতে একটা প্রাইভেট ইউনিট আছে। আমার কাছ থেকেও একবার টাকা নিয়েছিল ২৬০০ টাকা। আমি কমপ্লেন করেছিলাম।' শুধু একা দলবাহাদুরই নন, এরকম বেশকিছু বিলের নথি দেখিয়ে অভিযোগকারীদের দাবি, মৃত ব্যক্তিদের নামে ডায়ালিসিসের বিলের সংখ্যাটা অন্তত ৫০!!!


কী বলছে প্রশাসন:
তাহলে কি এর নেপথ্যে কোনও চক্র কাজ করছে? এর সঙ্গে কি জড়িত ডায়ালিসিস সেন্টারের একাংশ? জলপাইগুড়ির ডেপুটি  সিএমওএইচ জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, 'আমার কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে আপনাদের খবর দেখে আমরা নিজেরা তদন্ত করে দেখব।' BMRC পরিচালিত জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের ডায়ালিসিস সেন্টারের দায়িত্বে রয়েছেন সৌরভ দলুই নামে এক ব্যক্তি। এদিন তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, ফোন ধরেননি তিনি। 


আরও পড়ুন: জট কাটল জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোতে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনেই স্টেশন