রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি : বিষাদের দিনে বোধনের সুর। দশমীর পরের দিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে রাজবংশী সমাজের শস্যরক্ষার দেবী ভাণ্ডানির আরাধনা ঘিরে অন্য শারদ উৎসব। আনন্দে মাতলেন ময়নাগুড়ির বার্নিশ এলাকার বাসিন্দারা।


দশমীতে যখন সব এলাকায় দেবী বিদায়ের বিষাদ বিরাজ করে ঠিক তখন বার্নিশে এক দিনের এই দুর্গাপুজো উপলক্ষে জমে ওঠে গোটা এলাকা। একাদশীর দিনে বার্নিশের প্রাচীন ভাণ্ডানি মণ্ডপে সারাদিন চলে পুজো। পুজো দিতে সারা জেলার পাশাপাশি আশপাশের এলাকা থেকেও বহু মানুষ এখানে ভিড় করেন। আয়োজন হয় মেলার। দিনভর হাজার হাজার মানুষ পুজো দেন, প্রার্থনা করেন। আধুনিক আত্মকেন্দ্রিকতার বাঁধন ছিড়ে সপরিবার ও গ্রামের প্রত্যেক চাষির মঙ্গল কামনা-ই এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


বার্নিশ এলাকায় দেবী ভাণ্ডানি দ্বিভূজা। ব্যাঘ্রবাহিনী। রক্তিম বর্ণ। তিনি পশ্চিম মুখে বসেন। বাঘের পিঠে বসা দেবীর সঙ্গে আছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। 


মা ভাণ্ডানির পুজো ঘিরে বিভিন্ন জনশ্রুতি রয়েছে। যেমন বলা হয়- মা দুর্গা কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পর তিনি মর্ত্যে কেমন পুজো পেলেন, তা জানতে চান শিব। উত্তরে মা দুর্গা বলেছিলেন, মানুষ ভক্তি ভরে আমার পুজো করেছে। কিন্তু কৈলাসে ফিরেও মা দুর্গার মন ব্যথিত ছিল। তাই মা দুর্গা আবার মর্ত্যে ফিরে আসেন। 


অন্য গল্প হল, মা হিমালয়ের পাদদেশে একদল বালককে বাঘের ভয় দেখান। বালকেরা ভয় পেয়ে মা দুর্গার পুজোর আয়োজন করে। তারপর মা দুর্গা ফিরে যান কৈলাসে। 


লোককথা অনুযায়ী, বিজয়া দশমীর দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক ছেড়ে স্বর্গলোকে রওনা দেওয়ার সময় কৃষক সমাজের অভাব ও করুণ অবস্থা দেখে একদিনের জন্য থেকে গিয়েছিলেন। কৃষক সমাজের মঙ্গল কামনায় পুজো গ্রহণ করেন। সেই সময় এই এলাকা জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। চাষবাস হত না। মা এক রাত থাকার পর কৃষকদের এই এলাকা শস্যের ভাণ্ডারে ভরে যায়। এই ভাণ্ডার শব্দ থেকেই এসেছে ভাণ্ডানি।


সারা ডুয়ার্সে যতগুলি ভাণ্ডানি পুজো হয়ে থাকে তার মধ্যে সব থেকে প্রাচীন ময়নাগুড়ি বার্নিশের পুজো। গবেষকদের মতে, এই পুজো পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরনো। ভাণ্ডানি দেবীর নাম অনুসারেই গ্রামের নাম হয়েছে। এবছরও যথেষ্ট উৎসাহের সাথেই চলছে ভাণ্ডানি পুজো।