রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: জাতীয় সড়ক (National Highway) তৈরিতে জমি জট ঘিরে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেলেন কৃষকরা (Farmers)। জমি দিতে ইচ্ছুক কৃষকদের দাবি, অশান্তির নেপথ্যে বহিরাগতরা। আরেক অংশের সাফ কথা, কোনও মতে জমি দেবেন না তাঁরা। ঘটনাকে ঘিরে শুরু তৃণমূল(TMC)-বিজেপি (BJP) রাজনৈতিক তরজা। 


বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, পাল্টা পুলিশের লাঠি উঁচিয়ে তাড়া। ৪ লেনের এশিয়ান হাইওয়ে তৈরিকে কেন্দ্র করে ২৪ ঘণ্টা আগে এভাবেই অশান্ত হয়ে ওঠে ধূপগুড়ির (Dhupguri) খলাই গ্রাম। প্রশাসনের তরফে জমির মাপজোক শুরু হতেই বাধা দেন জমির মালিকদের একাংশ। জমি বিক্রি করতে চান না এই দাবি করে তাঁরা অভিযোগ করেন, বিনা নোটিসে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। 


ঘটনার পরের দিনই দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেলেন জমির মালিকরা। একদলের দাবি, শুক্রবারের অশান্তির পিছনে হাত ছিল বহিরাগতদের। ন্যায্য মূল্য পেলে জমি দিতে কোনও আপত্তি নেই। 


ধূপগুড়ি কৃষক বিপ্লব দত্ত বলেন, আমার ২ বিঘা জমি আছে। উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে ইচ্ছুক। কালকের ঘটনা আলোচনায় মেটানো যেত। আধিকারিকদের হেনস্থা সমরপ্থন করিনা। এটা ঘৃন্য। আমরা জমি দেব। এরা অন্যের প্ররোচনায় কাজ করেছে। অনেকে রাজনতৈকি দলের সঙ্গে যুক্ত। তাদের প্ররোচনা। ন্যায্য মূল্য দিলে জমি দেব।


খলাইগ্রামের জমিদাতা সুশীল বৈদ্য জানান, প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি। যেহেতু ৪ লেনের স্বার্থে জমি দিচ্ছি। যারা ঝামেলা করেছিল তাদের অনেকের জমির রেকর্ড নেই। সঠিক তথ্য নেই। যে জন্য গন্ডগোল। বাইরের কারও ইন্ধনে ঘটিয়েছে।


আর এক দলের বক্তব্য, কোনও মতেই জমি দেবেন না তাঁরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘোষপুকুর থেকে সলসলবাড়ি পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়ের চার লেনের কাজ চলছে।


ধূপগুড়ি বাইপাসের ৬ কিমি রাস্তার মধ্যে মাত্র ১ কিমির কাজ বাকি। সেই ১ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০০ মিটার জমির সার্ভের জন্য শুক্রবার ফলাইগ্রামে জমির মাপজোপে গিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্মীরা। যা নিয়ে অশান্তি ছড়ায়। ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি তরজা।


জলপাইগুড়ি তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সিংহের কথায়, ৫০০ মিটারের সার্ভে হচ্ছিল। জমিদাতারা সকলেই জমি দিতে ইচ্ছুক। ডিএমের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে যাদের জমি নেই। তাদের দেখা গিয়েছে। তাদের সব বিজেপির কর্মী। বিজেপির পতাকায় ঘোরে। তাদের অভিসন্ধি কি ছিল। ফোর লেনের কাজ হোক, এটা চায় না। জোর করে জমি নেওয়ার পক্ষে রাজ্য সরকার নয়। যারা জমি দিতে ইচ্ছুক তারাই দেবে। আমরা কিছু নাম প্রশাসনকে দিয়েছি।


জমি জট যেটা হচ্ছে সে বিষয়ে কৃষক স্বার্থ ও দেশের উন্নয়ন দেখতে হবে। রাজ্য সরকার হয়রান করছে জমিদাতাদের। দালালচক্র কাজ করছে। ক্ষতিপূরণ ঠিকমতো পাচ্ছেন না জমিদাতারা। রাজনৈতিক কারণে জট। বিজেপির লোক জড়িত নয়। কমিশন ওদের হচ্ছে না বলে উস্কানি দিচ্ছে। নাম দিচ্ছে বিজেপির। শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানিয়েছে প্রশাসন। 


জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, কালকের ঘটনায় অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে এফআইআর হবে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছি। আগামীতেও সার্ভের কাজ হবে। সেখানে বাধা দেওয়ার  চেষ্টা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জটে কবে, কীভাবে কাটবে, সেটাই এখন দেখার।