অনির্বাণ বিশ্বাস, জলপাইগুড়ি: উত্তরবঙ্গে (North Bengal) বিধ্বংসী ঝড়ের প্রায় ২ সপ্তাহ পার। কোনও সরকারি সাহায্য না মেলার অভিযোগ করছেন ময়নাগুড়ির গৌড়গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। ঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে 'আমরা-ওরা'র অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। যদিও গেরুয়া শিবিরের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।


৩১ মার্চ ৪ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছিল উত্তরবঙ্গের তিন জেলা। তার দু'সপ্তাহ পরও সরকারি সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ করছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এই ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ময়নাগুড়ির বার্ণিশ-সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। যার পর এলাকায় পৌঁছে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'আমি প্রশাসনকে বলব সার্ভে করে দেখুক এবং নিজের মতো করুক, কার কতটা ঘর ভেঙেছে, কতটা আংশিক ভেঙেছে, কতটা পুরো ভেঙেছে প্রশাসন তার সাহায্যের হাত কাল থেকেই বাড়িয়েছে এবং মানুষ বিপদে পড়লে এটা আমাদের সবার দরকার।' 


তারপর প্রায় দু'সপ্তাহ কাটতে চলল, সবাই কি সাহায্য পেয়েছেন? গৌরগ্রামের বাসিন্দা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিমল রায় বলেন, 'সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাইনি, শুধু প্লাস্টিক ছাড়া। সবার সার্ভে হয়নি। ঘর নিজেরাই মেরামত করেছি। থাকতে তো হবে।' 


বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য, প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে প্রচারে গিয়ে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে আরও আর্থিক সাহায্য পৌঁছে যাবে।


আরও পড়ুন, ভারতীয়দের পদবি নিয়ে কটাক্ষর মাশুল, ১০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হল কানাডার সংস্থাকে


কিন্তু শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে, দেখা গেল অন্য ছবি। এটা ধর্মপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরগ্রাম। ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বার্ণিশ গ্রামের ঠিক পাশের এই গ্রামেও ক্ষয়ক্ষতির বহর কিছু কম নয়। তবে কোনও আর্থিক সাহায্যই পাননি বলে দাবি করলেন অনেকে।


গৌরগ্রামের বাসিন্দা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত তোসিল রায় বলেন, আমার বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনও এনকোয়ারি হয়নি। তাই আমরা এক টাকাও পাইনি। ৫ হাজারও পাইনি, ২০ হাজারও পাইনি, ১০ টাকাও পাইনি। সঠিকভাবে এনকোয়ারিটা হোক, যাতে আমকা ঘরটা তো তুলতে পারি, আমরা তো গরিব মানুষ। আপাতত গোয়ালঘরটা কোনওরকমে করেছি।


ধর্মপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য মণীশচন্দ্র রায় বলেন, মুষ্টিমেয় ৫-৬টা বাড়িতে করে চলে গেছে। এই পাড়া বাদ দিয়ে অন্য পাড়ায় গিয়ে কাজ করছে। এখানে টোটালটাই পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। আমার কাছে খবর আছে, তৃণমূলের লোকেরা একটা লিস্ট করেছে। ১৬ জন বা ১৭ জনের লিস্ট। সেই লিস্ট অনুযায়ী ওরা কাজটা করছে। যারা প্রকৃত দাবিদার, তাদেরটা হবে না কেন? 


১৯ এপ্রিল উত্তরবঙ্গের তিন আসনে ভোটগ্রহণ। তার আগে ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ ঘিরে ক্ষোভ বাড়ছে গৌড়গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। 


 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে