রাজা চট্টোপাধ্যায় ও অরিন্দম সেন, কলকাতা: সূর্য ডুবলেই এলাকায় গা ছমছমে ভাব! গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, তাদের নাকি অনুভব করা যায়! তাই সন্ধে নামলে জলপাইগুড়ির দোমহনির রেল দুর্ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলেন বাসিন্দারা। এ সব কুসংস্কার বলে দাবি বিজ্ঞান মঞ্চের। সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করছে রেল ও প্রশাসন।



দুর্ঘটনার চারদিনের মধ্যেই পুরোদমে চালু হয়েছে ট্রেন। কিন্তু, ছন্দে ফিরতে পারছেন না জলপাইগুড়ির দোমহনির দুর্ঘটনাস্থল লাগোয়া এলাকার গ্রামের বাসিন্দারা। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বিকানের এক্সপ্রেসের আটটি বগি ঘিরে নতুন আতঙ্ক চেপে বসেছে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। গ্রামবাসীদের দাবি, সূর্য ডুবলেই না কি, এই সব কামরার পাশে তেনাদের আনাগোনা শুরু হয়। ভূতের ভয়ে সন্ধে হলে রেললাইনের পাশে যান না বাসিন্দারা। 


জলপাইগুড়ির এক বাসিন্দা বলেন, "আত্মার শান্তির জন্য করছি। কোনও অঘটন যাতে না হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে এমন। ভয় লাগে আসতে। সন্ধের পর আসতে চায় না।" কুসংস্কারে ভর করে, ভূত তাড়ানোর নামে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে চলছে হরিনাম সংকীর্তন, পুজোপাঠ। আরেক বাসিন্দার কথায়, দুর্ঘটনার পর আত্মাগুলো অত্যাচার করছে। আমরা কানে শুনতে পাই, এর জন্য হরিনাম সংকীর্তন করছি।' 


আসলে ভূত বলে কিছু হয় না। গোটাটাই কুংস্কার বলে দাবি বিজ্ঞান মঞ্চের। এই নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলছেন চিকিৎসকরা। জলপাইগুড়ি বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য শৈবাল দাশগুপ্ত বলেন, "এটা অপবিজ্ঞান, মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থাণ্বেষী লোক এটা করছে। এর জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ লড়াই করছে।" অন্যদিকে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, "বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা হল মানুষ মারা যাওয়ার পর অস্তিত্ব থাকে না। কুসংস্কার মনের ভয় থেকে এধরনের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। দাবি করে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।" 


প্রশাসনের তরফে দোমহনি স্টেশন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার করা হবে। আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম দিলীপ সিংহ বলেন, "আমরা মৃতদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা সচেতনতামূলক প্রচার চালাব এই নিয়ে। আমাদের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে।" গত ১৩ জানুয়ারি রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৯ জনের। সেই মৃত্যু নিয়েই এলাকায় চেপে বসেছেন অশরীরীর আতঙ্ক!
আধুনিক এই সময়ে কবে কাটবে এই কুসংস্কারের মেঘ? প্রশ্ন উঠছে।  রেল সূত্রে খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বগিগুলিকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।