পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর নিজেদের গড় ও সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা শুরু জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। শুরু হল নতুন কর্মসূচি 'জনতার দরবার'। 


একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলায় খুব একটা ভাল ফল করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। বাঁকুড়ার ১২টি বিধানসভার মধ্যে ৪টি বিধানসভা আসে তৃণমূলের দখলে। বাকি ৮টির মধ্যে বিষ্ণুপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক তন্ময় ঘোষ সম্প্রতি তৃণমূলে যোগদান করেন। ফলে এখন বাঁকুড়ায় তৃণমূলের ৫ বিধায়ক। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল খারাপ হওয়ার পরে জেলায় বেশ কিছু রদবদল করা হয়। বাঁকুড়া জেলাকে সাংগঠনিকভাবে দুই ভাগ, বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ও বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলে ভাগ করা হয়। 


বিধানসভা নির্বাচন ফলাফল খারাপ হয়েছে আবার সামনে পৌরসভা নির্বাচন। তার আগেই তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার এবং জনসংযোগ বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। গতকাল অর্থাৎ সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে তৃণমূলের নতুন কর্মসূচি 'জনতার দরবার'। 


রাজনৈতিক মহলের মন্তব্য, 'জনতার দরবার' কর্মসূচি করে তৃণমূল নেতৃত্ব তাদের হারানো জায়গা ফিরে পেতে চাইছে। তারা আশাবাদী 'জনতার দরবার' কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ তাদের অভাব অভিযোগ নিয়ে আসবে এবং সেই অভাব অভিযোগের কথা শুনে সমাধান করবে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। গতকাল বাঁকুড়ার তৃণমূল ভবনে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে ছিলেন তৃণমূল জেলার চেয়ারম্যান শ্যামল সাঁতরা, যুব সভাপতি সন্দীপ বাউড়ি ও তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়।


'জনতার দরবার'-এ অভিযোগ নিয়ে আসেন রবি সর্দার। তিনি জানান, 'আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা স্থায়ীকরণ ও বেতন বৃদ্ধি নিয়ে। যে কর্মচারীরা কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর কাজ করছে তাদের এখনও স্থায়ী করা হয়নি। সেই কারণে আমি 'জনতার দরবার'-এ এসেছি। এখানে আমাদের সমস্ত কথা শোনা হয়েছে। যদি এটা কার্যকরী হয় বা আমাদের সমস্যার সমাধান হয় তাহলে আরও ভাল লাগবে।' তাঁর দাবি এর আগে অনেকবার বলেও কোনও কাজ হয়নি।


বাঁকুড়ার জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান শ্যামল সাঁতরা বলেন, 'একটা নির্দিষ্ট তারিখে ৩ থেকে ৪ দিন আমরা বসছি একসঙ্গে। আমাদের শাখা সংগঠনের লোকেরাও বসছেন। মানুষের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ শুনছেন। এগুলোকে সমাধান করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। আমার সঙ্গে আমাদের দলীয় নেতৃত্ব আসছে। বিভিন্ন ব্লক ও অঞ্চল থেকে সমস্যার কথাও শোনা হচ্ছে।' তিনি আরও জানান, 'প্রথাগতভাবে দলকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সামগ্রিকভাবে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তার সুফল কিন্তু আমরা আস্তে আস্তে পেতে শুরু করেছি। বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্যই বাঁকুড়ায় খারাপ ফল হয়েছে। তার আগেও লোকসভাতে আরও বেশি খারাপ ফল হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে আমরা অনেকটাই মানুষকে বুঝিয়ে ফেরাতে পেরেছি। আমাদের এখন জয়টাই হচ্ছে সবথেকে বড় লক্ষ্য। এরপর সামনে পৌরসভা নির্বাচন আছে, তারপর পঞ্চায়েত, তারপর লোকসভা। সুতরাং এই জায়গাগুলোতে আমরা কীভাবে ভাল ফলাফল করতে পারি, সেই জন্যই আমরা নিয়মিতভাবে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল ভবনে 'জনতার দরবার' করা হয়েছে। মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শুনে সমাধানের চেষ্টাও করা হচ্ছে।'


বাঁকুড়া জেলার বিজেপি বিধায়ক ও সাধারণ সম্পাদক নীলাদ্রি শেখর দানা প্রশ্ন তুলেছেন, 'আজ ১১ বছর ধরে এই 'জনতার দরবার' কোথায় ছিল? তৃণমূল জনগণের সামনে যেতে পারছে না তাই পার্টি অফিসে জনতার দরবার খুলেছে। জনগণের দরবারে যদি এরা যায় তাহলে জনগণ উচিত শিক্ষা দেবে। সেই ভয়ে পার্টি অফিস থেকে জনতার দরবার করা হচ্ছে।' তবে তাঁর বক্তব্য মানুষ সম্পূর্ণভাবে এদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।