অমিতাভ রথ, জঙ্গলমহল:  জিতলে ট্রফি, আর হারলে কাটা যাবে ঝুঁটি! মকরসংক্রান্তিতে জঙ্গলমহলের বৈষ্ণবতীর্থ গোপীবল্লভপুরে ঐতিহ্য মেনে আজও চলে আসছে বুলবুল পাখির এই লড়াই। মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগেও প্রাচীন বুলবুল পাখির লড়াই হারিয়ে যায়নি এখনও। পাখির এমন লড়াই ঘিরে উন্মাদনা কমেনি এতটুকুও। এই খেলা ঘিরে আমজনতার লোকাচার, লোকবিশ্বাস চোখে পড়ে আজও।                             


এই বুলবুল পাখির ডুয়েল অবশ্য কেবল গ্রামবাংলাতেই নয়। চলত খাস কলকাতাতেও। উনিশ শতকের শহর কলকাতায় বুলবুল পাখির লড়াই দেখতে ছাতুবাবুর মাঠ অথবা দয়াল মিত্তির বাগান বাড়িতে জুড়ি গাড়ি চড়ে সেকালের বাবুরা আসতেন। সেই বাবু কালচার কালের নিয়মে হারিয়ে গেলেও জঙ্গলমহলে এই নিয়ম আজও চলে আসছে। রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার গোপীবল্লভপুরে পৌষ সংক্রান্তির দুপুরে এখনও বছরের একটা দিন বুলবুল পাখির লড়াই হয়।                                           


কীভাবে হয় সেই খেলা? 
 
গোপীবল্লভপুরের গোস্বামীদের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের কাছে চাঁদোয়া টাঙিয়ে হয় পাখি-যুদ্ধ। সম্মুখ সমরে থাকার সময় হাউসিদের হাতে ধরা পাকা কলার টুকরো দেখিয়ে রাগানো হয় পাখিদের। সঙ্গে লড়াইয়ের দম বাড়াতে দেওয়া হয় আখের রস। এভাবে একে একে পাখি এগিয়ে দিয়ে লড়াই এগিয়ে যায়।                                      


আরও পড়ুন, আগুন ধরতেই দম আটকে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় ৭২ যাত্রী! নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু


এবার শতাধিক পাখি লড়াইয়ের মঞ্চে এসেছিল। নিয়ম হল হেরে যাওয়া বুলবুলের ঝুঁটি কেটে তাদের ছেড়ে দিতে হবে। সেই কাজটি করছিলেন এই খেলার সেনাপতি যিনি। প্রসঙ্গত, দুটি দলের হয়ে যাঁরা এই পাখি লড়াই পরিচালনা করেন তাঁদের বলা হয় সেনাপতি। আর এই ঝুঁটি কাটার সঙ্গে মানমর্যাদা জড়িয়ে রয়েছে। গোপীবল্লভপুরেও পাখির লড়াই হয় দুটি পাড়া বাজারসাই ও দক্ষিণ সাইয়ের মধ্যে। স্থানীয় ভাষায় সাই অর্থাৎ পাড়া। এই লড়াই নিয়েও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই পাড়ার ব্যাপক উন্মাদনা থাকে। জয়ী পাখিকে কিছু দিন রেখে, খাইয়ে দাইয়ে তোয়াজ করে ছেড়ে দেওয়া হয় জঙ্গলে। এমন বিচিত্র অনুষ্ঠান দেখতে সূদূর ঝাড়খণ্ড এবং ও়ড়িশা থেকেও আসেন অনেকে।