কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) ছাত্রমৃত্যুতে গ্রেফতার করা হল আরও ৩জনকে। গ্রেফতার ২ প্রাক্তনী ও ১ বর্তমান পড়ুয়া। আজ সকাল থেকে যাদবপুর থানায় (Jadavpur Police Station) ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পরই গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। কী এদের পরিচয়? পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ২ প্রাক্তনীর নাম শেখ নাসিম আখতার, হিমাংশু কর্মকার। ধৃত বর্তমান পড়ুয়ার নাম সত্যব্রত রায়। গ্রেফতার শেখ নাসিম আখতার, রসায়নে স্নাতকোত্তর পাস আউট। গ্রেফতার হিমাংশু কর্মকার, সে গণিতে স্নাতকোত্তর পাস আউট। গ্রেফতার সত্যব্রত রায়, কম্পিউটার সায়েন্সে চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া।


পুলিশ সূত্রে দাবি  ৯ অগাস্ট রাতে ঘটনাস্থলে ছিলেন ৩ জন। ছাত্রমৃত্যুর পর ২ জন বাড়ি চলে যান, ১ জন ছিলেন হস্টেলে। সবমিলিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়ে ১২। প্রথমে ১, তারপর ২, এরপর ৬, আর এবার ৩  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায়, আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। 


প্রথমে গ্রেফতার ৩: যাদবপুরের পড়ুয়া মৃত্যুকাণ্ডে প্রথমে সৌরভ চৌধুরিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আরও দুই পড়ুয়া গ্রেফতার হয়। ধৃত দীপশেখর দত্ত অর্থনীতির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং অপর ধৃত মনোতোষ ঘোষ সোশিওলজি দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। পুলিশ সূত্রে খবর, মনোতোষেরই গেস্ট পরিচয়ে হস্টেলে থাকছিলেন ওই পড়ুয়া। মনোতোষ ও দীপশেখর তাঁকে মানসিক নির্যাতন করেন বলে পুুলিশ সূত্রে খবর। ধৃত প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীকে জেরা করে এই ২ জনের নাম জানা যায়। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের আজ ভোরে দুই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেল থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবল মানসিক চাপ তৈরি করা হয়েছিল পড়ুয়ার ওপর। কী সেই চাপ, কোন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, আর কারা জড়িত ছিল, ৩ জনকে জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।


পুলিশের জালে আরও ৬: এর পর ফের ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যাদবপুরকাণ্ডে নতুন যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিন প্রাক্তনী অসিত সর্দার, সপ্তক কামিল্যা ও সুমন নস্কর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা অসিত সংস্কৃত বিভাগের চলতি বছরের পাস আউট। আরেক সদ্য প্রাক্তনী সুমন মন্দিরবাজার ও পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রাক্তনী। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৩ পড়ুয়া। এদের মধ্যে রাজারহাটের নারায়ণপুরের বাসিন্দা অঙ্কন সর্দার ও জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষ এবং আসানসোলের বাসিন্দা আসিফ আজমল ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় এঁরা কোনও না কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন বলে মনে করছে পুলিশ।


ঘটনার প্রেক্ষাপট: গত ১০ অগাস্টেই ওলটপালট হয়ে যায় সব। এদিন মধ্যরাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের  পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যু হয়। গভীর রাতে তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হয় সে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয়। স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলে প্রথমেই অভিযোগ করেছিল তাঁর সহপাঠীর। সুস্থ স্বাভাবিক এক ছাত্রের কী করে মৃত্যু হল? প্রশ্ন তোলে পরিবার। শুরু হয় তদন্ত। তার পরেই প্রকাশ্যে আসে যাবতীয় তথ্য। খুনের মামলা দায়ের করেন মৃত ছাত্রের বাবা। পাশাপাশি জোরাল হয় যাদবপুরের ব়্যাগিং-এর অভিযোগও। ইতিমধ্যেই ছাত্রমৃত্যুতে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯জনকে। তদন্তকারীদের আতসকাঁচের তলায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে রেজিস্টার, ডিন, সুপারকে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। সেদিন রাতে আরও একটু তৎপর হলেই কি বেঁচে যেত একটা প্রাণ? এই অপরাধের শিকড় কোথায়? এ কি হিমশৈলের চূড়ামাত্র? সব মিলিয়ে হাজারও প্রশ্ন তুলেছে একটা মৃত্যুর ঘটনা।


আরও পড়ুন: Ragging: বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে ছাত্রের ওপর লাগাতার নির্যাতন, একাধিক অভিযোগেও অধরা সমাধান