কলকাতা: কলকাতা পুরসভার ভোটের পর ফলও প্রকাশিত হয়েছে। এরপর শপথও গ্রহণ করেছেন নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা। পরবর্তী মেয়র হিসেবে ফিরহাদ হাকিমের নামই ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়।
নতুন পুরবোর্ডের কাছে কী প্রত্যাশা শহরবাসীর? এবিপি আনন্দের যুক্তি-তক্কো অনুষ্ঠানে চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘আমি ভোটের প্রচণ্ড উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে পুরভোটের সময়টা কিছুদিন কলকাতার বাইরে ছিলাম। তবে ফলাফলের দিকে নজর রেখেছিলাম। আমি দেখলাম, ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে ববিদারা (ফিরহাদ হাকিম) প্রথম হয়েছেন। কেন জানি না মনে হচ্ছে, এই বাহুবলী গণতন্ত্রের ফলাফলগুলো ক্রমশঃ সিবিএসই-র মার্কশিটের মতো হতে শুরু করছে। কথিত আছে, ২০২২-২৩ সালে শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকে আশা করছেন, সিবিএসই-তে প্রথম দু-চারজন ১০৩, ১০৪, ১০৫ নম্বর পেলেও পেতে পারেন। সুতরাং নিকট ভবিষ্যতে যদি আমরা দেখি, কেউ ১৪৫-৪৬টা সিট পাচ্ছেন, তাহলে আমরা হয়তো খুব একটা আশ্চর্য হব না। কারণ, এই যে সদর্প গণতন্ত্র যেটা প্রায় ৯৩ শতাংশ অ্যাপ্রুভালে চলে গেছে, এটাও কিন্তু একটা দেখার মতো ব্যাপার। সবাইকে আমাদের আগাম অভিনন্দন রইল।’
কুণাল সরকার আরও বলেন, ‘আমরা যাকে নিয়ে কথা বলছি, আমাদের কলকাতা শহরের বয়স মোটামুটি ৩৩১ বছর পেরোল। জব চার্নক আলিবর্দি ও সিরাজ উদ দৌল্লার কাটমানিটা দেবে না বলে আজ থেকে ৩৩১ বছর আগে একটা ডোবাপুকুরের দুটো গ্রামকে বেছে নেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই ৩৩১ বছরের মধ্যে ১৩৮ বছর কেটেছে দেশের রাজধানী হিসেবে। তারপর ৭৪ বছর কেটেছে একটা রাজ্যের রাজধানী হিসেবে। ঝগড়া যদি আরেকটু এগোত, কেউ হয়তো শাসিয়ে বলতে পারত, তাড়াতাড়ি ঝগড়াটা কমাও, না হলে তোমাকে আমরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী করতে পারি। সেই ভাগ্যটা বাংলার বুকে এখনও হয়নি। রাজ্যের রাজধানী হতে গেলে অন্যান্য অঞ্চলগুলির চেয়ে স্বাস্থ্য ভাল হতে হতে হয়। কয়েকদিন আগেই নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, দারিদ্র্যসীমার মানের কিছুটা উপরে আছে কলকাতা। একটা সময় মহারাষ্ট্রের অর্থনীতি আমাদের অর্ধেক ছিল। এখন আমাদের অর্থনীতি মহারাষ্ট্রের অর্ধেক। বৃহন্মুমুম্বই পুরসভার বাজেট কলকাতার ১০ গুণ বেশি। আমাদের রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে বুঝতে হবে, আমরা কীভাবে গড্ডালিকা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে এসে এই রূঢ় বাস্তবে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে। এবার আমাদের সামনে এগোতে হবে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দিকে মন দিতে হবে পুরসভাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কীভাবে হকার সমস্যার সমাধান করেছে, সেটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে কলকাতা পুরসভাকে। ভোটের উন্মাদনার শেষে রাজ্যের একজন নাগরিক হিসেবে সব দলের কাছে আবেদন, সবাই এক না হলে উন্নতি সম্ভব নয়।’