পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: জিলিপি (jalebi) খেতে ভালোবাসেন? সবচেয়ে বড় সাইজের (giant size) জিলিপি কোথায় খেয়েছেন, মনে পড়ে? কত দাম ছিল তার? পিস প্রতি ৫, ১০, বড়জোর ২০ টাকা? কিন্তু ধরুন একটা জিলিপির দামই যদি তিনশো থেকে সাতশো টাকার (700 rupees) মধ্যে হয়, তা হলে? নাহ, গাঁজাখুরি গল্প নয়। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে ভাদু পুজো (bhadu puja) উপলক্ষ্যে একেবারে হাতেকলমে এমনই জিলিপি বিক্রি হচ্ছে বাঁকুড়ার (bankura) কেঞ্জাকুড়ায়। 


জাম্বো জিলিপি...
দেখতে একেবারে চেনা জিলিপির মতোই, কিন্তু আড়ে-বহরে দশাসই। এক একটির ওজন ২ থেকে ৩ কিলো। নাম জাম্বো জিলিপি। ভাদু পুজো উপলক্ষ্যে এই জাম্বো জিলিপি বিক্রির চল কেঞ্জাকুড়ায় বেশ পুরনো। শোনা যায়,পঞ্চকোট রাজ নীলমনি সিংহ দেও-র তৃতীয়া কন্যা ভদ্রাবতীর অকালমৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতেই রাঢ়বাংলায় ভাদু পুজোর সূচনা করেছিল রাজ পরিবার। সেই সময় দ্বারকেশ্বর নদের তীরে থাকা বাঁকুড়ার প্রাচীন গঞ্জ কেঞ্জাকুড়ায় রীতিমতো জাঁকজমকের সঙ্গে পুজো করা হত। সারা ভাদ্র জুড়ে ঘরে ঘরে লোকগানের মাধ্যমে ভাদু আরাধনার পাশাপাশি সংক্রান্তিতে হত ভাদুর জাগরণ। এই জাগরণে রাতভর বাড়িতে বাড়িতে চলত হুল্লোড়, নাচ গান আর দেদার খাওয়া দাওয়া। আয়োজন উপাচারে প্রতিবেশীর ভাদু পুজোকে টপকে যাওয়ার প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতাও চলত। সেই প্রতিযোগিতার ফলস্বরূপই ভাদুর সামনে নিবেদিত জিলিপির আকার বৃদ্ধি বাড়তে থাকে। জিলিপির আকারে অন্যের ভাদু পুজোকে টেক্কা দিতে সকলেই বড়, আরও বড় জিলিপির বরাত দিতে থাকেন কেঞ্জাকুড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ীদের। এভাবেই ধীরে ধীরে উত্থান ঘটে কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপির। সময়ের সঙ্গে পুজোর জনপ্রিয়তায় এখন ভাঁটার টান এসেছে ঠিকই, কিন্তু জাম্বো জিলিপি নিয়ে মাতামাতি কমেনি একচুলও। 


রসে-বশে-উৎসব...
রসে টইটম্বুর মুচমুচে জাম্বো জিলিপিতে কামড় বসিয়ে বছরভরের সাধপূরণই শুধু নয়, আত্মীয়-স্বজনকে সারপ্রাইজ গিফট হিসেবেও এই জিলিপি পাঠানোর চল রয়েছে কেঞ্জাকুড়ায়। শুধু স্থানীয় স্তরেই যে এই জিলিপির সুনাম আটকে রয়েছে, তা নয়। জেলার বাইরে, এমনকি লাগোয়া ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মানুষের কাছেও ভাদ্র সংক্রান্তির অন্যতম আকর্ষনীয় বস্তু এটি। স্বাভাবিক ভাবেই দূর দূরান্তের মানুষ এই সময় ভিড় জমিয়েছেন কেঞ্জাকুড়ায়। দেদার বিকোচ্ছে দেড় কেজি ,দু কেজি, তিন কেজি ওজনের জিলিপি। কেজি প্রতি দেড়শো টাকা দর পড়লেও বছরভরের রসনা তৃপ্ত করতে খরচে নিয়ন্ত্রণ করছেন না সাধারণ মানুষ। দু'বছরের করোনার খরা কাটিয়ে চলতি বছর বেচাকেনা ভালো হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও।
খুশির আমেজ সর্বত্র, জিলিপির মাধ্যমে উৎসবের রস ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশেও। 


আরও পড়ুন:ক্লাস চলাকালীন স্কুলের ছাদে বিস্ফোরণ, চাঞ্চল্য টিটাগড়ে, আতঙ্কিত পড়ুয়া, এলাকাবাসী