ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: ৯ অগাস্টের সেই রাত বদলে দিয়েছে এই শহরের ছবি। রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের গর্জন। এই ঘটনায় ন্যায় বিচার সহ এক গুচ্ছ দাবিতে গত দুমাসেরও বেশি সময় ধরে রাস্তায় জুনিয়র চিকিৎসকরা। অবস্থান আন্দোলন তো বটেই বেছে নিয়েছেন অনশনের পথও। এই আন্দোলনের পরিচিত মুখ চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার। এবার নিজের থিসস পেপার উৎসর্গ করলেন বোন তিলোত্তমাকে। কেন এই সিদ্ধান্ত? এবিপি আনন্দে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন জুনিয়র ডাক্তার রুমেলিকা কুমার। 


কেন উৎসর্গ? 


অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্‌থ-এ কমিউনিটি মেডিসিনের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া রুমেলিকা কুমার। আন্দোলনকারী চিকিৎসক বলেন," অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে থিসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। পরীক্ষার ৬ মাস আগে তা সাবমিট করতে হয়। ডিসেম্বরে আমার পরীক্ষা। জুনে যখন থিসিস সাবমিট করি তারপর ৯ অগাস্ট এই ঘটনাটা ঘটে। ব্যক্তিগতভাবে ঘটনাটা শুনে আঘাত পাই। তারপর ন্যায়বিচারে নিজের বিবেকের কাছে উত্তর দিতে না পেরে আন্দোলনে নেমে পড়া। গত কয়েকদিন ধরে রাস্তায় থাকা। আমরা থিসিস প্রিন্ট করিয়ে গাইড, কো-গাইড, ডিপার্টমেন্টে দিতে যাই। এটা অত্যন্ত আনন্দের জীবন। মাইলস্টোন গোছের। ৭৫ দিন ধরে একটা জিনিস মনে হচ্ছিল এরপরও আমরা এটা করতে পারব। তাঁরও করার কথা ছিল। সেও হয়ত গবেষণা পত্র জমা দিত। হয়ত একইভাবে থিসিস প্রিন্ট করিয়ে গাইড, কো-গাইড, ডিপার্টমেন্টে দিতে যেত। আমরা যতই ন্যায়বিচারের দাবিতে এগুলো করি না কেন, এটা তো আর সম্ভব নয়। এটা তাঁকে করতে দেওয়া হল না। পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হল না। জীবন নষ্ট করে দেওয়া হল। তাঁর পরিবার নষ্ট করে দেওয়া হল। অনেকগুলো স্বপ্নকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেওয়া হল। সে আর থিসিসটা জমা দিতে পারবে না। এই অনুভূতিটা বারবার একটা কাজ করছে। নিজের বিবেকের কাছে উত্তর দিতে, কষ্ট ভাগ করে দিতে, আজীবন যেন এটা আমার সঙ্গে থাকে, যেন কখনও ভুলে না যাই এই ঘটনা সেই জায়গা থেকেই এই ভাবনা। মনে রাখতে চাই আমারও এক বোন ছিল, যাঁকে এরকম একটা ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল। তাঁকে এই সমাজ এই শাসক চিকিৎসক হতে দেয়নি। এই ঘটনা সারাজীবন না ভোলার অঙ্গীকার থেকেই এই থিসিসটা তিলোত্তমাকে উৎসর্গ করেছিলাম।'' 


ঠিক কী লিখেছিলেন? 


আরজি কর কাণ্ডের পর নিরাপত্তা সহ কয়েকদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। একেবারে প্রথম সারিতে থেকে আন্দোলন করছেন রুমেলিকাও। যিনি বেছে নিয়েছিলেন অনশনের পথও। রুমেলিকার কথায়, "আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি আমি থিসিসটা শেষ করতে পেরেছি, কিন্তু ওঁকে সেই সুযোগটা দেওয়া হয়নি। তাঁর জীবন, কেরিয়ার সব শেষ করে দিয়েছে। একটা সম্ভাবনাকে শেষ করে দিয়েছে। সেই ঘটনা মনে রেখে, সামনের লড়াইটা তো খুব কঠিন তাতে তিলোত্তমাকে সাথী করে তাঁকে উৎসর্গ করে আমি আমার থিসিস নিবেদন করলাম।'' 


কোনওভাবে আশঙ্কা হচ্ছে যে থিসিস গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে বা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে? 


আন্দোলনে নেমে বরাবর দৃপ্ত কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছেন রুমেলিকা। আগামীতেও কোনও আঘাত নেমে এলেও সামলে নেবেন বলেই সাফ জানালেন। জুনিয়র চিকিৎসকের কথায় "থিসিস অ্যাক্সেপ্ট হয়ে গেছে। তারপরই প্রিন্ট করতে দেওয়া। গত ৭৫ দিন ধরে নানা আঘাত নেমে এসেছে। কিছু মানুষ এমন কুৎসা করেছেন যে তাঁদের নাম নিতেও পারছি না। আঘাত তো অনেক নেমে এসেছে। এতদিনে কোথাও গিয়ে মনে হয় যে ব্যক্তিগত বা কেরিয়ারে জীবনে, আঘাত নেমে আসতে পারে। নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার হয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে নেমেছি। একটা জিনিস মনে করি, নিজের বিবেকের কাছে ঠিক ছিলাম ঠিক আছি বলেই এই আঘাত নেমে এসেছে। আঘাত নামলে সামলে নেব। ভয়ে পেয়ে সরে যাব না।'' 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।   


আরও পড়ুন: Cyclone Dana Update: ধেয়ে আসছে আরও একটা ঘূর্ণিঝড়, চট-প্লাস্টিক নিয়ে বাঁধ মেরামতিতে গ্রামের মহিলারা