কোচবিহার: সকালে গুলিতে খুন তৃণমূল কর্মী, রাতে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল প্রার্থীর ভাই! পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু-দুটি শ্যুটআউট দিনহাটার গীতালদহে! তৃণমূল প্রার্থীর ভাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় এখনও থমথমে গীতালদহ ১ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের ভোরাম এলাকা। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে পৌঁছেছে। গীতালদহ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান বিজলি বিবি এবারও একই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী। গতকাল বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন তৃণমূল প্রার্থীর ভাই সাইনুল হক। তাঁর পেটে গুলি লেগেছে। কোচবিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সাইনুলের।
রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়ের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষকৃতীরাই গুলি চালিয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় কীভাবে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এল? তাতে বিএসএফের কোনও মদত রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কোচবিহারের প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভাপতি। অভিযোগ উড়িয়ে কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিরঞ্জন দে-র দাবি, শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীর ভাই। গীতালদহ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী বিজলি বিবির স্বামী মাফুজা রহমান তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। স্থানীয় তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, জেলবন্দি ও বহিষকৃত তৃণমূল নেতা আবু অল আজাদের সঙ্গে মাফুজা রহমানের বিবাদ দীর্ঘদিনের। তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী মাফুজা রহমানও আগে জেল খেটেছেন। এবার পঞ্চায়েত ভোটে জেলবন্দি বহিষকৃত তৃণমূল নেতা আবু অল আজাদের অনুগামীরা টিকিট পাননি। তাঁদের বেশিরভাগই নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কয়েকজন বিক্ষুব্ধ আবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
ভোটের আগে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বাংলা। বারুদের স্তুপ চারদিকে। সম্প্রতি বীরভূমে মাড়গ্রামে বোমা বাঁধার অভিযোগে গ্রেফতার বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী-সহ ৫ জন। পুলিশের দাবি, বোমা বাঁধার সময় হাতেনাতে পাকড়াও করা হয়। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাসন ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ওয়াসেফ রহমান ওরফে চমৎকার শেখ। গতকাল রাতে বাহিরগোড়া গ্রামে ঘটনাস্থল থেকে ২ ড্রাম ভর্তি তাজা বোমাও উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বোমা তৈরির প্রচুর মশলা। প্রায় ৪০টির মতো বোমা রয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। পুলিশ অন্য জায়গা থেকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন ধৃত কংগ্রেস প্রার্থী। তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।
রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসা নিয়ে এখনও কাটছে না জট। শনিবার রাতের মধ্যে ৩১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী না এলে, অ্যাকশন নেওয়ার কথা বললেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। এর মধ্য়েই রবিবার ফের রাজভবনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে তলব করেছেন রাজ্যপাল।
দলের কাউকে পাশে পাননি বলে গতকালই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল আদ্রার নিহত তৃণমূল নেতার পরিবার। ক্ষোভ সামলাতে আজ ধনঞ্জয় চৌবের বাড়িতে যান মন্ত্রী মলয় ঘটক। তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। এর আগে গতকাল নিহত তৃণমূল নেতার দাদার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাজ্যপাল। পরিবারকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেন। নিহত তৃণমূল নেতার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বহনেরও প্রস্তাব দেন সি ভি আনন্দ বোস।