কলকাতা: মন্ত্রিকন্যার চাকরি গিয়েছিল তাঁর দায়ের করা মামলায়। তার পর মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন পরেশ অধিকারী (Paresh Adhikari)। চাকরি গিয়েছিল তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীরও (Ankita Adhikari)। সেই চাকরি এবং অঙ্কিতার মাসোহারা বেতনের পুরোটাই পেয়েছিলেন মামলাকারী ববিতা সরকার (Babita Sarkar)। কিন্তু স্কুল শিক্ষিকার সেই চাকরি ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। নম্বর বিভ্রাটের জেরে চাকরি হারাতে হল তাঁকেও। একই সঙ্গে আদালতে ভর্ৎসিতও হতে হল ববিতাকে (Calcutta High Court)।


স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছেন ববিতা!


ববিতা চাকরি পাওয়ার পরই তালিকায় তাঁর পরে নাম থাকা অনামিকা রায় (Anamika Roy) সরব হয়েছিলেন। তাঁর থেকে নম্বর কম পেয়েও ববিতা চাকরিটা কী ভাবে পেলেন, প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সেই অনামিকাকেই চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতও মেনে নিয়েছে যে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছেন ববিতা। 


চাকরি-সহ এর আগে অঙ্কিতার বেতনের ১৬ লক্ষ টাকাও পেয়েছিলেন ববিতা। সেই টাকাও অনামিকার হাতে তুলে দিতে হবে তাঁকে। তবে গত কয়েক মাস স্কুলের চাকরি করে বেতন বাবদ তিনি যে টাকা তুলেছেন, তা ফেরত দিতে হবে না বলে জানিয়েছে আদালত। তবে আদালতে ভর্ৎসনা থেকে রেহাই পাননি ববিতা। 


আরও পড়ুন: Babita Sarkar : ববিতা সরকারের চাকরি বাতিল, পরিবর্তে অনামিকা রায়কে নিয়োগের নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের


এ দিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তীব্র ভর্ৎসনা করেন ববিতাকে। তিনিই কমিশনকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। ববিতার উদ্দেশে তিনি বলেন,"আপনি ভুল করেছেন। আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। আপনার উদ্দেশে আমি কড়া পদক্ষেপ নিতে পারতাম, কিন্তু নিচ্ছি না। আপনার ভুলেই  হয়েছে। আপনার বেতন ফেরত দিতে বলিনি, এটাই আপনার সান্ত্বনা।" এর পরই মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত।  তিন সপ্তাহের মধ্য়ে নিয়োগ করতে বলা হয় অনামিকাকে।

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে কয়েক মাস আগে চাকরিপ্রার্থীদের নম্বরের তালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তাতেই ববিতার নম্বর-বিভ্রাট সামনে আসে। অনামিকা দাবি করেন,  ফর্ম ফিলাপের সময় ববিতা লিখেছিলেন, তিনি স্নাতক স্তরে ৮০০ র মধ্যে ৪৪০ পেয়েছেন। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ। কিন্তু, ফর্মে লেখা তিনি ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন।


কমিশনের তালিকা সামনে আসার পরই নম্বর ঘিরে বিভ্রাট দেখা দেয়


অনামিকার যুক্তি ছিল,  ৬০ শতাংশের বেশি পেলে ববিতার অ্য়াকাডেমিক স্কোর হয় ৮। আর ৬০ শতাংশের কম হলে স্কোর তা ৬ হয়।  তার ভিত্তিতেই ববিতাকে অ্য়াকাডেমিক স্কোরে কমিশন ২ নম্বর বেশি দিয়েছে বলে দাবি করেন অনামিকা। তিনি জানান, ববিতার অ্য়াকাডেমিক স্কোর যেখানে ৩১ হওয়ার কথা, সেখানে তাঁকে ৩৩ নম্বর দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এর পর আদালতের দ্বারস্থ হন অনামিকা। 


অঙ্কিতার থেকে পাওয়া ১৬ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে ববিতাকে। তবে ববিতা জানিয়েছেন, এখনই পুরো টাকা ফেরত দিতে পারবেন তিনি। সেকেন্ড হ্যান্ড একটি গাড়ি কিনেছেন, মামলায় খরচ হয়েছে। আপাতত ১৯ মে-র মধ্যে ১১ লক্ষ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে। ৬ জুনের মধ্যে দিতে হবে বাকি টাকা।