সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: জামিনের (bail) শুনানিতে (hearing) অনুব্রত মণ্ডলের (anubrata mondal) 'কাঁটা' শিবঠাকুর মণ্ডল (shivthakur mondal)। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন (Justice Jaymalya Bagchi) বেঞ্চের মন্তব্য, 'পুলিশকে ব্যবহার করে একজনকে এভাবে গ্রেফতার করা যায় না। সিবিআই যে আশঙ্কা প্রকাশ করছে তা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। খুনের চেষ্টার অভিযোগে ১ বছর পর অনুব্রতকে কেন গ্রেফতারির প্রয়োজন পড়ল? কেন এফআইআরের প্রয়োজন পড়ল, কোনও আঘাতের চিহ্ন পেয়েছিলেন?' সঙ্গে সংযোজন, 'পুলিশের এই কার্যপদ্ধতি অত্যন্ত লজ্জাজনক।'


কী ঘটল?
সিবিআইয়ের তরফে মূলত যে যুক্তি দেখানো হয়েছে, তাতে বলা হয় অনুব্রত একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তিনি গোটা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করতে পারেন। এতেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে আরও দাবি করা হয়েছিল, এর মধ্য়েই এই প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন তিনি। শিবঠাকুর মণ্ডলের আনা বছরখানেক আগেকার অভিযোগের ভিত্তিতে কেন হঠাৎ এখন এফআইআর দায়ের করা হল? প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি। যে পুলিশ অফিসার এই এফআইআর করেছিলেন, তিনি কি শিবঠাকুরের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পেয়েছিলেন? ন্যূনতম কোনও অনুসন্ধানও করেছিলেন কি? যেখানে সিবিআই প্রভাবশালী তত্ত্বের ভিত্তিতে আজ ফের সওয়াল করেছে, সেখানে হাইকোর্টের এই মন্তব্য আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। সিবিআইয়ের তরফ থেকে বার বার অভিযোগ করা হচ্ছে, অনুব্রত ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের জেলের ভিতর থেকে ফোন করে নানা নির্দেশ দিচ্ছেন।  যদিও এক্ষেত্রে বিচারপতি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করেছেন, তাদের দাবির স্বপক্ষে কী প্রমাণ রয়েছে? সিবিআইয়ের আইনজীবীর যুক্তি, ফেসটাইম অ্যাপের মাধ্যমে ফোন করতেন কেষ্ট। তাই সেই কথোপকথন জানা সম্ভব হয়নি।


কী সওয়াল আজ?
এদিন শুনানিতে জানতে চাওয়া হয়, '৯৫ জন তালিকাভুক্ত সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৩৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। বাকিদের সাক্ষ্য কবে নেওয়া হবে?' তখনই উঠে আসে শ্রীযুক্তি সিনহার কথা। বলা হয়, 'তদন্ত প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছেন জনৈক শ্রীযুক্ত সিন্হা।'কিন্তু কে এই শ্রীযুক্ত সিনহা? সেই নিয়েও চলে সওয়াল। আদালতে অনুব্রতর আইনজীবী কপিল সিবাল অবশ্য দাবি করেন, 'এনামুল হক ও বিএসএফ কম্যান্ডান্ট সতীশ কুমার জামিন পেয়েছেন। এখন হঠাৎ করে অনুব্রতকে মূল চক্রান্তকারী বলা হচ্ছে, তিনি ১৪৫ দিন জেলে।' বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির মন্তব্য, 'এটা বলতেই হয় যে অনুব্রতর অনেক ভাল বন্ধু আছেন, যারা আপনার মুক্তির জন্য হুমকি দেন। যদিও এটা আপনার ভালোর জন্য না খারাপের জন্য সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে।' সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, 'অনুব্রত মণ্ডলের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপত্তির সাহায্য নিয়ে এনামুল হক বাংলাদেশে গরুপাচার করত। সায়গল হোসেনের মাধ্যমে অনুব্রত মণ্ডলের কাছে বিপুল অর্থ নগদে পাঠাত এনামুল হক। একটা বড় চক্র কাজ করত, আব্দুল লতিফও এই কাজে সাহায্য করত। এই চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকদের কাছে ঘুষের টাকা পৌঁছত। অনুব্রত মণ্ডল জেলের ভিতর থেকে এনামুল হক সহ একাধিক ঘনিষ্ঠকে ফোন করেছেন।' 'কোন এলাকা থেকে কথা হয়েছে, একমাসের মধ্যেও তা জানতে পারেননি?' সিবিআইকে পাল্টা প্রশ্ন বিচারপতির। 'অন্য মামলায় এক অভিযুক্তর মৃত্যুতে সিবিআই আধিকারিকদের নামে এফআইআর করা হয়েছে।' 'তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে', দাবি সিবিআইয়ের আইনজীবীর। 
 


আরও পড়ুন:সাতসকালে তেলের ট্যাঙ্ক ফেটে বিপত্তি, এনআরএস হাসপাতালে অল্পের জন্য রক্ষা কর্মীর