অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, কাকদ্বীপ : কাকদ্বীপে শিক্ষক নিগ্রহকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেয়েছেন তৃণমূল নেতা। শিক্ষক পিটিয়েও জামিন পেয়েছেন ত্রিদিব বারুই। তাঁর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। গতকাল গ্রেফতার হয়েছিলেন অভিযুক্ত, আর আজ জামিন পেয়ে গিয়েছেন শিক্ষক পেটানো তৃণমূল নেতা। কাকদ্বীপের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে স্কুলের মধ্যে পড়ুয়াদের সামনেই মারধর করা হয়। দেওয়া হয় ঘাড়ধাক্কাও। সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর প্রবল চাপের মুখে গতকাল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তারপর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। বলা যেতে পারে ১২ ঘণ্টার মধ্য়েই কাকদ্বীপে শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগে অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ও স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি ত্রিদিব বারুই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। ৫ রকমের জামিনযোগ্য ধারা দিয়েছিল পুলিশ। ফলে হল না সওয়াল-জবাবটুকুও। মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই শুনানি শেষ। শিক্ষক পিটিয়েও অনায়াসে জামিন পেলেন তৃণমূল নেতা। প্রথমে শিক্ষককে মার। তারপর চাপের মুখে অভিযুক্তকে গ্রেফতার পুলিশের। জামিনযোগ্য় ধারা দেওয়া। তারপরই তৃণমূল নেতার জামিন। নিন্দার ঝড় সর্বত্র।
আর এই ঘটনায় কী বলছেন কাকদ্বীপের ওই আক্রান্ত শিক্ষক?
আক্রান্ত শিক্ষক মিলনকান্তি পাল বলছেন, 'পুলিশের ধারাগুলো দেখে হতাশ হয়েছি। গ্রেফতার করার সময় পুলিশ খুব সক্রিয় ছিল। তারপর এই ধারাগুলো দেখে হতাশ হয়েছি। আমার আইনজীবী বলেছিলেন যে এত লঘু ধারা হয়েছে যে উনি জামিন পেয়ে যাবেন। এটা অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জক। জামিন পেতেনই, আমি জানি। কিন্তু সেটা হয়তো তিন-চারদিন বা আরেকটু বেশি। এত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন ভাবিনি। আতঙ্কিত নই। এত সহজে আতঙ্কিত হই না আমি। তবে আশঙ্কা রয়েছে। স্কুলে এসে সামান্য কথায় এত উত্তেজিত হয়ে আচরণ। এরকম আবার হতে পারে। চারদিকে তো দেখছি। আমার বয়স প্রায় ৫৯ বছর। আশ্চর্যজনক ঘটনা স্কুলের অফিসে সিসিটিভি ফুটেজ কী কারণে ডিলিট বা ইরেজড বুঝতে পারছি না। তার আগে পরে আছে। সেই সময়টা নেই। তখন হাসপাতালে গেছিলাম। প্রচণ্ড প্রেশার বেড়ে গেছিল। মাথা ঘুরছিল। বুক ধড়ফড় করছি। তাই গেছিলাম। একটু বসে ওষুধ খেয়ে ফিরে আসি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে। এসে আমার অফিস রুমের সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি। আমার সন্দেহ কেউ ইচ্ছে করে ডিলিট করেছে। উনি স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি থাকলে আবারও এই ঘটনা ঘটতে পারে। আগেও এ ধরনের ব্যবহার আগে ক্ষমা করেছি সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ থাকার পরেও। আগে মোটামুটি সদ্ভাব ছিল। অনেক দিনের পরিচিত এলাকার লোক। ভেবেছিলাম সংশোধিত হবেন। তবে এবারের ঘটনার পরে বুঝেছি সংশোধিত হবেন না। এই ব্যবহার আগেও অনেক মিটিংয়ে হয়েছে। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ নেই সেখানে মিটিং করতে হবে। অফিস রুমে পরিচালন সমিতির সভা করতে দেন না। বুঝতে পাছেন উদ্দেশ্য কোনদিন। ভয়েস রেকর্ডিং ফুটেজ রয়েছে। শুনলে বুঝবেন তীব্র কোলাহল, চিৎকার, আক্রোষ। এই চেয়ার কাঁটার চেয়ার, কাঁটার মুকুট। সকলকে তো খুশি করা যায় না। চেয়ারে বসার পর ওঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব হয়েছে। টিউবওয়েল বসাতে দিচ্ছেন না। অথচ এখান থেকেই জল নেন। স্কুলের পাম্প চালিয়ে। এখানকার কারেন্ট পুড়িয়ে। কিন্তু টিউবওয়েল বসাতে দিচ্ছেন না স্কুলের প্রয়োজনে। তৈরি হলে ভেঙে দিচ্ছেন। ডায়েরি করেও ওনার প্রভাবের জন্য কিছু সুরাহা হয়নি। জল বন্ধ করে দিয়েছিলাম, তাই আমার উপর রাগ আছে। প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পর জল দিয়ে দিতাম। ভেবেছিলাম ভাল হয়ে যাবেন, শুধরে যাবেন। আমার বলতে বাধা নেই, শিক্ষক প্রতিনিধিদের অনেকে আছেন যাঁরা ওনাকে উস্কানি দিচ্ছেন, আমার বিরুদ্ধে প্ররোচিত করছেন।'