গৌতম মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সে প্রায় এক শতক আগেকার কথা। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশানের জঙ্গল সাফ করে টালির ছাউনির চার চালা মন্দির তৈরি করেছিল স্থানীয় চক্রবর্তী পরিবার। মজে যাওয়া আদিগঙ্গার তীরে, বটগাছে ঘেরা শ্মশানেই ১১০ বছর আগে গড়ে উঠেছিল মন্দির। (South 24 Parganas Kali Puja 2023) দক্ষিণ ২৪ পরগনার (Mandir Bazar Kali Puja 2023) মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের সেই পুজো আজও রীতি-নীতি মেনে চলে আসছে।


ইতিহাস...  
শোনা যায়, পরিবারের কর্তা মণিলাল চক্রবর্তীকে স্বপ্নে দেবী নির্দেশ দিয়েছিলেন অপঘাতে মৃত ১০৮টি নরমুন্ডের করোটি দিয়ে পুজো দিতে। কালীপুজোয় ভূত-অমবস্যা তিথিতে সমস্ত রীতি রেওয়াজ মেনে, তান্ত্রিক মতে শুরু হয়েছিল পুজো। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী, দেবীমূর্তির চারপাশে ১০৩টি নরমুন্ডের করোটি সাজিয়ে রেখে ৫টি নরমুন্ডের ওপর বসে দেবীর আরাধনা শুরু করেছিলেন পরিবারের কর্তা মণিলাল। তারপর থেকে বংশপরম্পরায় চলে আসছে চক্রবর্তী পরিবারের পুজো। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পরিবারের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গত ৩০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পরিবারের মণিলালের পুত্র শ্যামল চক্রবর্তী। বর্তমানে চক্রবর্তী পরিবারের প্রবীণ সদস্য তিনি। প্রত্যেক বছর ভুত-অমবস্যা তিথিতেই দেবীকে তান্ত্রিক মতে পুজো করা হয়। ইচ্ছেপূরণের আশায় পুজোর রাতে মন্দির চত্বরে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয়। পুজোয় কখনও ভাটা পড়তে দেননি পরিবারের সদস্যরা। বরং দিন যত গড়িয়েছে, পুজোর জৌলুস আরও বেড়েছে। প্রথামাফিক অমবস্যা তিথিতে কালীপুজোর রাতে শ্মশানের চিতার আগুন জ্বলার পর আদি গঙ্গার মাটি ও জল দিয়ে শুরু হয় পুজো। এবারও তার যাতে কোনও ব্যতিক্রম না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই চলছে তোড়জোড়।


বহুরূপে সম্মুখে...
আজ মা কালী-র আরাধনা বাংলার নানা দিকে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র পুজোর তোড়জোড়। সেজে উঠেছে বীরভূমও। কংকালিতলা বা ফুল্লরা মায়ের মন্দিরের কথা হয়তো অনেকেরই জানা। কিন্তু নানুরের দাসকলগ্রামের কালীপুজোর কথা কজন জানেন? এখানে পুজোর বয়স ১ হাজার বছরেরও বেশি। কিন্তু কোনও দেবীমূর্তি নেই। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে মা গর্ভগৃহে অবস্থান করছেন। বীরভূমের নানুরের দাসকলগ্রামের কালীপুজো  পাষাণ কালীর পুজো বলেও পরিচিত। এখানে পাষাণ মা, গ্রামের দেবী হিসেবেই পূজিতা। আর তাঁর আরাধনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও বহু বিশ্বাস। লক্ষণীয় বিষয় হল, এই পুজোয় কোনও মূর্তির আরাধনা হয় না। গোটা গ্রামে কোনও কালীমূর্তিও নেই। এমনকি গ্রামের কোনও বাসিন্দার বাড়িতে কোনও কালীমূর্তির ছবি পর্যন্ত নেই। এখানে পাষাণ কালী গ্রামের দেবী। স্থানীয়দের বিশ্বাস, প্রাচীনকালে জায়গাটি ঘন জঙ্গলে ভরা ছিল জায়গাটি। মানুষের বসবাস ছিল অন্যত্র। পরবর্তীকালে এক সাধু জঙ্গলের মধ্যে মা কালীর সন্ধান পান। তার পর ধীরে ধীরে সেখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে, এখানে পুজো দিতে আসেন অনেকেই। নিত্য পুজোর পাশাপাশি, বিশেষ বিশেষ দিনে এখানে পুজো হয়ে থাকে। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, ভক্তি ভরে মায়ের কাছে মানত করলে তা পূর্ণ হয়। সেই আশাতেই দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমান ভক্তরা। আরও একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়। গ্রামের বাসিন্দারা এখনও পর্যন্ত আস্ত মুরগি নিয়ে গ্রামের চৌহদ্দির মধ্যে ঢোকেননি। কারও বাড়িতে মুরগি পোষাও হয় না। দেবী আরাধনার সঙ্গে লোকায়ত বিশ্বাসের যোগাযোগ তাঁদের জীবনের পরতে পরতে স্পষ্ট। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এখানেও আরাধনার তোড়জোড় তুঙ্গে।


আরও পড়ুন:মহাকালী রূপে পূজিতা, দু’বার ভোগের আয়োজন কঙ্কালীতলায়