সোমনাথ মিত্র, হুগলি: দীপান্বিতা কালী পুজোর আগের দিন কৃষ্ণ চতুর্দশীতে পুজিত হন মা। দেবীর ইচ্ছা অনুযায়ী এখনো মাটির বেদিতেই পুজো করা হয় মূর্তিকে। সারা বছর এই গ্ৰামে হয় না আর কোনও কালী পুজো। 

Continues below advertisement

আরও পড়ুন, রাজ্যে SSC, PSC-র ভয়াবহ অবস্থা, নতুন চাকরি তো নেই, ৬ লক্ষ স্থায়ী পোস্টও বিলুপ্ত, MA পাস করেও টোটো চালক : শুভেন্দু

Continues below advertisement

হুগলি জেলার জাঙ্গিপাড়া ব্লকের আঁটপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আনরবাটি গ্রাম। প্রায় আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গ্রামে "বড় মা" রুপে পূজিত হয়ে আসছেন মা কালী। একদিনের এই পুজোকে কেন্দ্র করে ভিড় উপচে পড়ে গোটা এলাকায়। নীল বর্ণা , দু-হাত বিশিষ্ট এই কালী পুজিত হন শ্যামা কালীর পুজোর ঠিক আগের দিন। কৃষ্ণ চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী তিথিতে সূর্যাস্তের পর  আনরবাটি গ্রামের প্রায় ৬০ জন যুবক মাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে এসে মাটির বেদীতে অধিষ্টিত করেন। তালপাতা দিয়ে মায়ের মাথা ছাউনি করা হয়। সারারাত ধরে চলে  পুজো অর্চনা।‌ এখনও এই পুজোয় বলি প্রথার প্রচলন আছে। পরেরদিন  সূর্যাস্তের আগেই মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়  গ্রামের পুকুরে। এক রাতের এই পুজোকে ঘিরে দূরদুরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় গোটা আঁটপুর এলাকায়।।

এই পুজোর আরও বৈশিষ্ট্য হল, বড়কালীর সাথে গোটা গ্রামে ছোটকালী, মেজ কালী, ন্যাড়া কালী, ছেলে কালী, সহ আরো ৭টি কালী পুজো হয় একই দিনে, একই সময়ে ।  বড়কালী বিসর্জন এর পর একে একে বাকি আরো কালী মাকে বিসর্জন দেয়া হয় সূর্যাস্তের আগেই। এরপর সারা বছর জুড়ে এই আনরবাটি গ্রামে আর কোন কালীপুজো হয় না। তাই "বড় মা"এর এই পুজোকে কেন্দ্র করে কার্যত উৎসবে চেহারা নেয় গোটা আনরবাটি এলাকা।।

প্রচলিত কথা ও স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এই গ্রামে বড়মার পুজো শুরু হয়। তখন এই এলাকায় মহামারীর কারণে গ্রাম উজার হয়ে যাচ্ছিল। অনেকে মারা যাওয়ার পর বাকিরা গ্রাম ছেড়ে পালাতে থাকে। তখন এক সাধু গ্রামে এসে, মহামারী থেকে বাঁচতে  মায়ের পুজো করার আদেশ দেন। সেই আদেশ অনুযায়ী এলাকার  মিত্র ও বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পূর্বপুরুষরা কাত্তিক মাসের ভূত চতুর্দশী তিথিতে বড় মা এর  পুজো শুরু করেন। এখন এই দুটি বাড়ির সাথে গ্ৰামের অন্যান্য মানুষেরা মিলে একটি কমিটি তৈরী করে পুজো পরিচালনা করেন। প্রাচীনকালে যে জায়গায় মাকে বসিয়ে পুজো শুরু করা হয়েছিল এখনো ঠিক সেই জায়গায় মাটির বেদীতেই মাকে বসিয়ে সারারাত আরাধনা করা হয়। এবং প্রাচীনকালের রীতি মেনেই সূর্যাস্তের আগেই মাকে বিসর্জন দেয়া হয়।।

মিত্র বাড়ির সদস্য গোপাল মিত্র জানান, বড় মা সবার মনস্কামনা পূর্ণ করেন। মা খুবই জাগ্ৰত। অনেক মৃত প্রায় মানুষ মায়ের কাছে পড়ে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।  মায়ের ইচ্ছা ছাড়া কেউ কোন কাজ করতে পারেন না।পুজোর দিন মায়ের হাতে নাড়ু ও লুচি দেওয়া হয়। আনর বাটি বড় কালীমাতা পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ অমিত অধিকারী বলেন, মাকে যেখানে বসানো হয় সেটা মাটির  পঞ্চ মুন্ডীর আসন।‌ দুটি বাঁশের মাথায় মাকে বসিয়ে গ্ৰামের ৬০ জন যুবক শুদ্ধ কাপড় পড়ে মাকে বয়ে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো হয়। তারপর শুরু হয় মায়ের পুজো। এরপর শ্যামা কালী পুজোর দিন বা বছরের অন্য কোনও দিন এই গ্ৰামে আর কোনও কালী পুজো হয় না।