আবির দত্ত, কালীগঞ্জ : কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক ঘটনা। শাসক দলের বিজয়োল্লাসের সময় ছোড়া বোমাতে নৃশংস ভাবে মৃত্যু হয়েছে ৯ বছরের বালিকার। বুধবার নিহত বালিকার বাড়িতে আর্থিক সাহায্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শাসক দলের বিধায়ক (ডেবরা) হুমায়ুন কবীর। এরপরই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন নিহত বালিকা তামান্নার মা। 

প্রতিনিধি- রাজ্যের এমএলএ, তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ, এসছিলেন আপনার বাড়িতে হুমায়ুন কবীর, আপনাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন?

তামান্নার মা- হ্যাঁ 

প্রতিনিধি- কী বলেছিলেন? 

তামান্নার মা- উনি এসছিলেন। খাম দিল। ফোন নম্বর আছে। ফোন করবে। ওতে টাকা আছে। আমি মানুষ হিসেবে দিয়েছি। উনি তো টিএমসি-র... মানুষ হিসেবে... এখন মানুষ হিসেবে আমাকে কীসের জন্য দিতে আসবে? আমার মুখ বন্ধ করার জন্য দিতে এসেছে। আমার মুখ বন্ধ করতে চায় উনি। যেই আমাকে টাকা দেবে... 

প্রতিনিধি- কিন্তু উনি বলছেন উনি অন্য সংস্থার তরফে সাহায্য করতে এসেছিলেন 

তামান্নার মা- কী করে সাহায্য করবে... আমি তো বললাম... পালিয়ে চলে গেল কেন তাহলে... বলল না যে হ্যাঁ মা আমি ওই বোম তোলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি এখনি... কই বলে গেল না তো... ক্ষমতা আছে তো... ওদের তো ক্ষমতা আছে। আমি জানতে চাইলাম ওই বোম কেন এখনও উদ্ধার হয়নি। উনি উত্তর না দিয়ে চলে গেল। বলল আমি মানুষ হিসেবে দেখা করতে এসেছিলাম। উনি তো উপরের জায়গায় আছে। 

ডেবরার তৃণমূল বিধায়কের দেওয়া আর্থিক সাহায্য প্রত্যাখান করেছেন নিহত বালিকা তামান্না খাতুনের মা সাবিনা ইয়াসমিন। ক্ষোভে, রাগে, দুঃখে ফুঁসে উঠে তিনি বলেছেন, 'যদি মেয়েমানুষ হত, চুল ধরে ছিঁড়ে তাঁকে মেরে দিতাম।' 

নিহত বালিকার মায়ের অভিযোগ, 'মুখ বন্ধ' করার জন্যই তাঁকে টাকা দিতে আসা হয়েছিল। এদিকে বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের দাবি, তিনি একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে সাহায্য করতে এসেছিলেন। বিধায়ক বলেন, 'আমার কোনও কর্মসূচি নয়। আমি একজন মানুষ হিসেবে এসেছি। এটা মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ। প্রত্যেকটা মানুষের গর্জে ওঠা উচিত। যার কাছেই বোমা থাকবে যে কোন দলের, কোন বর্ণের, কোন ধর্মের মানুষ দেখার দরকার নেই। প্রত্যেকটা মানুষের গর্জন করা উচিত।' 

কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন আলিফা আহমেদ। শাসক দলের জয়োল্লাসের সময় বোমার আঘাতে যে বালিকার মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বাড়িতে এখনও একবারের জন্যেও যাননি আলিফা। এই নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন নিহত বালিকার মা সাবিনা ইয়াসমিন। চোখের জল নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছেন, 'একবার আসেনি। কী করে ভরসা থাকে? একবার আসেনি। আসা দরকার নয়? একবার দুঃখ জানাতে আসেনি। দুনিয়া কেঁদে যাচ্ছে, তার কানে পৌঁছাচ্ছে না, তার জন্য যে আমার মেয়ে চলে গেল, সে জিতে গেল বলে, তার জন্য আমার মেয়ে চলে গেল... সে একবার এখনও পর্যন্ত আসেনি। একটা কোনও কিছু তার নেই। সে আসতে পারেনি। তার আসার ক্ষমতা নেই। সে জানে আমাদের ইশারাতে এই কিছু হয়।'