সোমনাথ মিত্র, হুগলি: "যেই কালী সেই কৃষ্ণ", কালী নিয়ে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের এই ভাব উপলদ্ধি যেন সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে এখানে। কারণ দক্ষিণা কালী এখানে নীলবর্ণা, একহাতে খড়গ, আরেক হাতে বাঁশি। সিঙ্গুর নান্দা সন্ন্যাসীঘাটা ব্রহ্মময়ী মা কৃষ্ণকালী রূপেই বিরাজমান। 


সিঙ্গুরের নান্দা সন্ন্যাসীঘাটা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ইতিহাস প্রসৃদ্ধ সরস্বতী নদী। প্রায় ১০০ বছর আগেরকার কথা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার এক চিকিৎসক যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নিয়মিত এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতেন। একদিন মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত জঙ্গল ঘেরা শশ্মানে ধ্যানমগ্ন হন। এবং মৌন ব্রত গ্ৰহণ করেন। সাধনার ১২বছর পর মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই কালী মূর্তি প্রতিষ্টা করে পুজো অর্চনা শুরু করেন। 


স্থানীয়দের দাবি তিনি হয়ত স্বপ্নে মায়ের এই রূপ দর্শন পেয়েছিলেন বা কোন ভাব উপলদ্ধি করেছিলেন তাই এই কৃষ্ণ কালী মূর্তি প্রতিষ্টা করেন। তারপর থেকে সেই একই মূর্তিতে আজ অবধি মায়ের আরাধনা হয়ে আসছে। তখন টালির চাল দিয়ে তৈরী কুঠিরে মায়ের আরাধনা হত। কালক্রমে মায়ের মন্দির জীর্ণ হয়ে পড়ায় স্থানীয়রা উদ্দ্যোগ নিয়ে মায়ের নতুন মন্দির তৈরী করেন। কিন্তু মায়ের বিগ্ৰহের কোন পরিবর্তন করা হয়নি। মন্দিরের একদম পিছনেই সেই কালী সাধকের সমাধি অবস্থিত। এবং তার পিছন দিয়ে এখনো প্রবাহিত সরস্বতী নদীর। যদিও নদী তার আগের গৌরব হারিয়েছে। 


দক্ষিণা কালী এখানে কৃষ্ণকালী রূপে বিরাজমান। সারা অঙ্গ নীল বর্ণ। তার একহাতে খড়গ, অন্য হাতে বাঁশি, আরেকহাতে মুণ্ড, অন্য হাতে ফুল। মন্দিরের গর্ভগৃহে মায়ের মূর্তির পাশাপাশি রাধাকৃষ্ণ, জগন্নাথ দেব ও অধিষ্ঠিত। কালীর পাশাপাশি পুজিত হন এই সমস্ত দেবতাও। তাই কালী পুজোয় এখানে বলি প্রথার প্রচলন নেই। অমবস্যা তিথিতে নিয়ম সহকারে ব্রহ্মময়ী মায়ের পুজো অর্চনা করা হয়। কালী পুজোয় উপচে পড়ে ভক্তের ভিড়। পাশাপাশি রাস উৎসব, জগন্নাথ এর রথযাত্রা, শিবরাত্রি, দোল উৎসব উৎযাপিত হয় ব্রহ্মময়ী মায়ের মন্দির চত্বর এলাকায়। জাগ্ৰত মায়ের মহিমায় দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় সারা বছর ধরেই। 


মন্দিরের পুরোহিত অমর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখন কোন অসুস্থ মানুষ মায়ের দরবারে এসে প্রার্থনা করলে আমরা তাকে মায়ের ফুল, জল দিলেই সে সুস্থ হয়ে ওঠে। শোনা কথা মৌনি বাবা একদা বাঘ মেরে ছিলেন। সেই বাঘ ছালের উপর পঞ্চমুণ্ডি আসন তৈরী হয়। সেই আসনে তিনি ও তার পরবর্তী দু-একজন ছাড়া কেউ বসে পুজো করতে পারে না। 


স্থানীয় ব্যক্তি প্রেম প্রসাদ অধিকারী জানান, মায়ের একহাতে খড়গ, যেমন দুষ্টের দমন করার বার্তা দেয়, তেমনি এক হাতে বাঁশি মানুষের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা জন্মানোর একটা বার্তা দেন। এটাই এখানকার মায়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। 



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে