ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: কালীপুজোয় (Kalipujo) পুণ্যার্থীর ঢল বীরভূমের (Birbhum) সতীপীঠে (Satipith)। বোলপুরের কঙ্কালীতলা থেকে লাভপুরের ফুল্লরা, বিশেষ দিনে শক্তিপীঠে হাজির দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা।
লালমাটির জেলা বীরভূমে শাক্তপীঠের ছড়াছড়ি। বোলপুরের কঙ্কালীতলা থেকে লাভপুরের ফুল্লরা, দীপান্বিতা অমাবস্যায় সতীপীঠগুলি যেন সেজে উঠেছে নতুনভাবে। বয়ে চলা কোপাইয়ের পাড়ে অবস্থিত কঙ্কালীতলা মন্দিরে দিনভর পুণ্যার্থীদের ভিড়।
বোলপুর শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এই কঙ্কালীতলা মন্দির। কঙ্কালীপীঠের মন্দিরে কোনও বিগ্রহ নেই। রয়েছে শ্মশানকালীর বাঁধানো ছবি। ঘটে আর পটেই হয় নিত্যপুজো। কালীপুজোর দিন মহাকালী রূপে পূজিতা হন দেবী। এক পুণ্যার্থী মৌসুমী সান্যাল বলেন, 'প্রতি মাসে আসি। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে আসার চেষ্টা করি। নিজস্ব পরিতৃপ্তি, ইমোশোনস-এর ব্যাপার।'
তন্ত্রচূড়ামণিতে কাঞ্চী নামের জায়গাকে ২৮তম সতীপীঠ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কথিত আছে, সেই কাঞ্চীদেশই হল আজকের কঙ্কালীতলা। পীঠনির্ণয়তন্ত্র অনুসারে কঙ্কালীতলায় সতীর অস্থি বা কঙ্কাল পড়েছিল, তা থেকেই পীঠের নাম হয় কঙ্কালীতলা। আবার রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল থেকে জানা যায়, কঙ্কালীতলায় সতীর কটিদেশ বা কোমরের অংশ পড়েছিল।
জনশ্রুতি এখানেই পড়েছিল সতীর দেহাংশ। কঙ্কালীতলা মন্দিরের পুরোহিত বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী বলেন, 'প্রচুর ভক্ত আসছে, প্রচুর ভক্ত যাচ্ছে। তাঁদের সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। পাশে কুণ্ড আছে। ওখানে মায়ের কাঁখাল পড়েছিল। তাই নাম কঙ্কালীতলা।'
বীরভূমের আরেক সতীপীঠ ফুল্লরাতেও কালীপুজোয় দিনভর পুণ্যার্থীদের ভিড়। কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রাম লাভপুরে দেবী ফুল্লরার মন্দিরেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু সতীপীঠের ভক্তিভাবধারার স্রোত যেন বয়ে চলেছে নিজের নিয়মে। ৬৬ বিঘা জমি নিয়ে ফুল্লরা মহাপীঠ। জনশ্রুতি, প্রাচীনকালে এই এলাকা অট্টহাস নামে পরিচিত ছিল।
কথিত আছে, ফুল্লরায় সতীর ওষ্ঠ পড়েছিল। জনশ্রুতি আছে, বেনারসে মণিকর্ণিকা ঘাটে কৃষ্ণদয়াল গিরি নামে এক সাধক সাধনা করেছিলেন। মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েই তিনি জল, জঙ্গলে ঘেরা লাভপুরে আসেন এবং দেবী ফুল্লরাকে আবিষ্কার করেন।
বর্তমান যে মন্দির রয়েছে, ১৩০২ বঙ্গাব্দে জমিদার যাদবলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তা নির্মাণ করান। দেবী এখানে শিলামূর্তি হিসেবে পূজিতা হন।