কলকাতা : 'কলকাতার রাস্তায় সেই ভয়ানক কামদুনি আন্দোলন (Kamduni Movement) আবার জেগে উঠবে।' ১০ বছর পর কলকাতা হাইকোর্টের কামদুনিকাণ্ডের রায় ঘোষণার পর এমনই মন্তব্য করলেন নির্যাতিতার ভাই। 


কী ঘটেছিল ১০ বছর আগে ?


২০১৩ সালের ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Paragana) কামদুনিতে বাড়ি ফেরার পথে এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে আট বিঘে ভেরি অঞ্চলে রক্তাক্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়। কামদুনিকাণ্ডে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। ৯ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তদন্তভার যায় সিআইডি-র হাতে। ২ বছরের বেশি মামলা চলার পর, ২০১৬-র জানুয়ারিতে অভিযুক্ত ৬ জনকে দোষী সাব্য়স্ত করা হয়। তথ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করা হয় ২ জনকে। মামলা চলাকালীন ১ অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। ৩ জনকে মৃত্য়ুদণ্ড এবং ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় নগর দায়রা আদালত। দোষীরা ওই রায়কে চালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যায়। আজ সেই মামলায় রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। 


রায় অনুযায়ী, ৩ আসামীর ফাঁসির সাজা মকুব করা হয়। ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ফাঁসির বদলে দোষী সাব্যস্ত আনসার আলি মোল্লা ও সইফুল আলি মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলিকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরও ৩ জনকেও মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় ৩ জনের মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল হক, ভোলানাথ নস্কর, আমিনুর ইসলামের মুক্তি। সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ ৭ বছর, ১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামদুনির ২ প্রতিবাদী টুম্পা এবং মৌসুমী কয়াল। 
  
এদিকে নিহত কলেজছাত্রীর ভাই জানিয়ে দেন, 'সুপ্রিম কোর্ট, রাষ্ট্রপতি...যতদূর যাওয়ার হয় যাব। নির্ভয়াকাণ্ডে যেমন সবার ফাঁসি হয়েছে, আমরাও চাই সবার ফাঁসি। যত বিন্দু রক্ত আছে, তত বিন্দু লড়ব। কলকাতার রাস্তায় আবার কামদুনি জেগে উঠবে। সেই ভয়ানক কামদুনি আন্দোলন আবার জেগে উঠবে।' 


রায়ের পর আদালত চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়া কামদুনি কাণ্ডের অন্যতম প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল বলেন, “টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকারের উকিল।  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বিচার দিতে পারলেন না।’’


টুম্পা কয়াল বলেন, 'আমরা অনেক আশা নিয়ে হাইকোর্টে এসেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম যারা দোষী তারা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়। রাজ্য়ের মানুষ দেখেছিল আমাদের আন্দোলন, আমরা নিরপেক্ষ ভাবে আন্দোলন করেছিলাম। আমরাও আরও ভরসা করেছিলাম আমাদের সরকারের উপরে। আমাদের সরকার গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে যারা দোষী তারা শাস্তি পাবে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা হাইকোর্টে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি।'