কলকাতা : ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে গিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, বিভাগীয় প্রধানকে বদলি করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও নাকি দিয়েছেন কাঞ্চন। এই প্রসঙ্গে কী বলছেন তৃণমূল বিধায়ক? কাঞ্চন মল্লিক জানিয়েছেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী হাসপাতালে গিয়েছিলেন এক আত্মীয়কে দেখাতে। কাঞ্চনের কথায়, তাঁর দিদা শাশুড়ি, ৮৬ বছরের বৃদ্ধা, হুইল চেয়ারে বসা, আসানসোল থেকে এসেছিলেন। আগেও ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। ভাল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এদিন গিয়েছিলেন রিপোর্ট দেখাতে। সেটা দেখান স্কিন ডিপার্টমেন্টে দেখান। তারপর ওই বৃদ্ধাকে মেডিসিন বিভাগে দেখানোর জন্য রেফার করা হয়। কাঞ্চন বলছেন, তিনি স্কিন ডিপার্টমেন্টে রিপোর্ট দেখানোর সময় ওপিডি- তে টিকিট কেটেই গিয়েছিলেন। পরে মেডিসিন বিভাগে দেখানোর সময়েও ওপিডি- তে টিকিট কেটে দাঁড়িয়েছিলেন। 

কাঞ্চন মল্লিকের কথায়, মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডক্টর রহমান তাঁকে দেখতে পেয়ে কথাও বলেন। তিনি জানান তিন-চারজন রোগী রয়েছে। তাঁদের দেখে নিয়েই কাঞ্চন মল্লিকের দিদা শাশুড়িকে দেখবেন। এরপর যখন তিনি ডাক্তারবাবুর কাছে রোগীকে দেখাতে নিয়ে যান, সমস্যা শুরু হয় তখন। তৃণমূল বিধায়কের কথায়, 'উনি জিজ্ঞেস করেন স্কিন ডিপার্টমেন্টে তো দেখিয়েছেন। আবার এখানে এলেন কেন? আমার তো কিছু করার নেই এখানে।' জবাবে কাঞ্চন বলেন, 'আমায় আসতে বলা হল। তাই এসেছি। বলেছে যখন একবার দেখে নিন। অনেক বয়স। অন্তত প্রেশার ঠিক আছে কিনা সেটা দেখে নিন।' কাঞ্চনের অভিযোগ, এরপর ডক্টর রহমান নাকি বলেন, 'পেশেন্টকে দেখব কিনা সেটা কি আপনি ঠিক করবেন?' তৎক্ষণাৎ ক্ষমা চেয়ে নেন কাঞ্চন। বিধায়কের কথায়, 'আমি বলি না না সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি। এরপর আগের একটা প্রেশারের ওষুধ নিয়ে আমার স্ত্রী প্রশ্ন করেন যে সেটা চলবে কিনা। তাতে হঠাৎ ডাক্তারবাবু বলেন আপনি কি এমবিবিএস ডাক্তার? তাহলে এখানে আসুন। প্রেসক্রিপশন করে নিন। তখন আমি বলেছি আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি তো ডাক্তারকেই ওষুধের কথা জিজ্ঞাসা করব। একজন ৮৬ বছরের বৃদ্ধাকে কোন ওষুধ খাওয়াবো, সেই ব্যাপারে ডাক্তারকেই তো জিজ্ঞাসা করব। এখানে অন্যায় কোথায়? আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? উনি বলেন আমি দিনে দু'হাজারটা পেশেন্ট দেখি। আমি বলেছি সেটা তো আপনার ডিউটি। উনি চিৎকার করেন। তখন বলি আপনি গলা নামিয়ে কথা বলুন। আমি তো ওপিডিতে টিকিট কেটেই এসেছি। এখানে অন্যায়টা কোথায়?' 

ঘটনার সময় আউটডোরে উপস্থিত থাকা এক রোগীর আত্মীয় জানিয়েছেন, একজন শিশুকে পরীক্ষা করছিলেন ডক্টর রহমান। সেই সময় রিপোর্ট দেখাতে যান কাঞ্চন এবং তাঁর স্ত্রী। স্বভাবতই রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকার ফলে সেভাবে উত্তর দিতে পারছিলেন না ওই সিনিয়র ডাক্তার। তখনই শুরু হয় সমস্যা। ওই যুবকের অভিযোগ, কাঞ্চনের স্ত্রী ডক্টর রহমানের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর জানতে যান। কাঞ্চন মল্লিক এবং তাঁর স্ত্রী, দু'জনেই একপ্রকার ওই ডাক্তারকে 'দেখে নেওয়ার' হুমকি দেন। এরপর ওইখানে থাকা বাকি রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের প্রতিবাদে বাধ্য হয়েই আউটডোর ছেড়ে চলে যান তৃণমূল বিধায়ক এবং তাঁর স্ত্রী। আউটডোরে থাকা রোগী, তাঁদের পরিজন এবং জুনিয়র চিকিৎসকরা বারবার বলেছেন, ডক্টর রহমানের কোনও দোষই ছিল না। উল্টে তাঁর সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। পুলিশে কোনও অভিযোগ এখনও দায়ের হয়নি। স্বাস্থ্য ভবন পরবর্তীতে যা নির্দেশ দেবে সেই মতোই এগোবে ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন কর্তৃপক্ষ।