আবীর দত্ত, ফাঁসিদেওয়া : আতঙ্কের ঘোর কাটছে না। মনে হচ্ছে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে দেখলেন। প্রায় দাঁড়িয়ে পড় ট্রেনে সকাল বেলা যে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে , ভাবতে পারেননি কেউই। হঠাৎ বিষম দুলুনি। বিকট আওয়াজ। কেউ ভেবেছিল ভূমিকম্প । কেউ অজানা আতঙ্কে ট্রেন থেকে দিয়েছেন লাফ। কেউ আবার সিট থেকে ছিটকে গিয়েছেন পড়ে। ওই ট্রেনেরই তিনটি কামরা যে এক মুহূর্তে মৃতদেহের স্তূপে পরিণত হয়েছে, তা ভাবতেও পারেননি কেউ।
যেমন গৌতম রায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রী তিনি। মৃত্যুকে উপলব্ধি করেছেন যেন। বললেন, 'আমরা ট্রেনের ভিতরে ছিলাম। হঠাৎ ঝাঁকুনি দেয় মারাত্মক। আমরা লাফ দিয়ে পড়ি। তারপরে বেরিয়ে দেখি আমাদের কামরার ২-৩টি পিছনের কামরা বেলাইন হয়ে গিয়েছে। পরে দেখি মালগাড়ির কামরাও পড়ে গিয়েছে। আমরা সাতজন ছিলাম। পরে দেখি লোকজন আসছে', জানালেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রী গৌতম রায়।
এই ট্রেনেরই যাত্রী অন্তরা দাস। ধ্বংসলীলা দেখে কাঁপছিলেন থরথর করে। বাঁচবেন না , ভেবেই ফেলেছিলেন। সাত মাসের গর্ভবতী তিনি। বললেন, 'প্রচুর ভয় পেয়ে গেছি। যখন এরকম হয়েছে। মনে করেছি যে আর বাঁচবই না। মরেই যাব। ট্রেনটা তো মানে উল্টে যেতে যেতে থেকে গেল। তারপর আমরা ওইখান থেকে নেমে গেলাম। আমাদের তো মানে সিটের থেকে ফেলে দিয়েছে।' গর্ভের সন্তানের কথা ভেবে আতঙ্কিত। বললেন, ' আমরা সবাই যার যার উপর পড়ে গেছি। আস্তে যাচ্ছিল ট্রেনটা। দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ঝাঁকুনি হল। আমরা তো মনে করলাম ভূমিকম্প হল। ভূমিকম্পের মতো।'
আরেক যাত্রী বললে, 'আমি ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখছি ট্রেনটা...আমার স্ত্রী পড়ে গেছে। দুলছে একেবারে। ঘাবড়ে গেছি একেবারে। একেবারে পড়ে গেছি। ট্রেনটা হিলছে এরকম। পড়ে গেছি। সবাই বলছে দুর্ঘটনা হল। আমি তো নার্ভাস হয়ে গেছলাম। ৫ মিনিট তো আর আমার মুখ থেকে কোনও শব্দ বেরোচ্ছে না। একেবারে চুপ হয়ে গেছিলাম।'
এ যেন মৃত্যুকে উপলব্ধি করে জীবনে ফেরা। নিজেকে চিমটি কেটে বিশ্বাস করানো, বেঁচে আছি ! বাহানাগা বাজারের ভয়াবহ দুর্ঘটনার ১ বছরের মাথায় ফের একবার ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল এ দেশ। এবার মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় থামবে ? উত্তর দেবে সময়ই ।
আরও পড়ুন :
ড্রাইভারের মৃত্যু-শঙ্কা, মৃতের সংখ্যা হতে পারে ২৫ থেকে ৩০, কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রেন দুর্ঘটনায় কী বার্তা রেলমন্ত্রীর?