সমীরণ পাল, ঝিলম করঞ্জাই ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : হাসপাতালে ঢুকে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য়কর্মীদের হুমকির ঘটনায় আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পরও কৌস্তভ বাগচীকে তৃতীয় নোটিস পাঠাল মোহনপুর থানা। এদিকে, ডাক্তারকে হুমকি, হেনস্থায় অভিযুক্ত, কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি । প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি নেতাকে নিয়ে যেখানে এত সক্রিয়তা... সেখানে একই অভিযোগে অভিযুক্ত, তৃণমূল বিধায়ককে নিয়ে এত নিষ্ক্রিয়তা কেন?  

একদিকে ব্য়ারাকপুরে হাসপাতালে ঢুকে বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচির হুমকি। অন্য়দিকে স্কুল অফ ট্রপিক্য়াল মেডিসিনে গিয়ে তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্য়বহার ও বদলি করে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ। শাসক-বিরোধী দু পক্ষের দুই নেতার এই আচরণ ঘিরেই এখন জোর বিতর্ক। 

বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচীর বিরুদ্ধে FIR দায়ের হয়েছে। ৩ বার পুলিশ তলব করেছে। কিন্তু তৃণমূল কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে কী ব্য়বস্থা নিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন ? কেন তাঁর বিরুদ্ধে এখনও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করল না ? এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। অ্য়াসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স-এর জেনারেল সেক্রেটারি উৎপল বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, "সেখানে একজন রাজনৈতিক নেতার যে আচরণ সেটাকে আমরা নিন্দা করেছি এবং পুলিশ এখানে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে শুনেছি। এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত আমরা যেটা জানতে পেরেছি যে, সেখানকার ডিরেক্টর স্বাস্থ্যভবনের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, কী করা উচিত। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও প্রশাসনিক পদক্ষেপ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রহণ করেননি। এটা অত্যন্ত দুঃখের।"  ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সদস্য় কৌশিক চাকি বলেন, "এটাকে আমরা বলি সিলেক্টিভ প্রসিকিউশন। ১৪ তলা থেকে যদি কারো মাথায়, তিনি তাঁর দলের কেউ হলে তাঁর সাত খুন মাফ, এই ঘটনা কৌস্তভ বাগচীর ক্ষেত্রে যা ঘটল এবং কাঞ্চন মল্লিকের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যা ঘটনা ঘটেছে...আমাদের মনে হয় সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটনা ঘটেছে।" 

বুধবার, স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে বিভাগীয় প্রধানকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অভিযোগ জানিয়েছেন। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের ডিরেক্টর কিংবা, যাঁর সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই চিকিৎসক কেউই কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাননি। 

এই আবহেই বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী সোশ্য়াল মিডিয়ায় লিখেছেন, ব্যারাকপুরে একটি প্রাইভেট নার্সিং হোমে ডাক্তার ও ম্যানেজমেন্টের গাফিলতিতে একজন গরিব মানুষ মারা গেলেন। তার প্রতিবাদ করায়, পিসি ভাইপোর নির্দেশে, কিছু ডাক্তার সংগঠন আমার বিরুদ্ধে গর্জে উঠল, পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করল। ওদিকে সরকারি হাসপাতালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাঁকে বদলির হুমকি দিলেন তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক ! ডাক্তার সংগঠনগুলো কই ? পুলিশ কই ?

বিজেপির রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, "উত্তরপাড়ার বিধায়কের যা আচরণ সেই আচরণ তো অনুকরণীয় নয়। সমালোচনার যোগ্য। নিশ্চিতভাবে জানুন, যদি বিজেপির কোনও কার্যকর্তা বা বিধায়ক করতেন, নতুন যে মেডিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট তৈরি হয়েছে, সেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হত। আমরা পুলিশমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে জানতে চাই, কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি ?"  

অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "বিজেপির এক তৎকাল নেতাও কয়েকদিন আগে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে জঘন্য ব্যবহার করেছেন। কাঞ্চন মল্লিকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা আছে সেটা কিন্তু অতখানি সিনক্রিয়েট অবধি যায়নি। কোনও একটা জায়গায় কাঞ্চন মল্লিক ধৈর্য এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। যে অংশটা এড়ালেই ভালো হত। সেটা তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্টভাবে বলেছে।" 

৭ জুলাই ব্য়ারাকপুর কোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী। ১২ তারিখ অর্থাৎ শনিবার হাজিরা দিতে তাঁকে ফের নোটিস পাঠিয়েছে মোহনপুর থানা।