সৌমেন চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুর: পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেশপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে দফায় দফায় তালা ঝোলালেন কর্মী-সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা পরিষদের দফতরে বৈঠক ডাকে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। বৈঠক চলাকালীন তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহার বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে দলেরই একাংশ। তৃণমূলের বিবাদ মেটাতে কেন জেলা পরিষদে বৈঠক, প্রশ্ন তুলে জেলাশাসককে ই-মেল করল বিজেপি।


দ্বন্দ্বে জেরবার কেশপুর


রবিবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পার্টি অফিসে তালা ঝুলল। ২৯ নভেম্বর, কেশপুরেই কোন্দলে অশান্ত হয় পার্টি অফিস। পঞ্চায়েত ভোটের আগে, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে বারবার সামনে চলে আসছে তৃণমূলের অন্দরের বিবাদ।


গত ২৮ নভেম্বর অঞ্চল সভাপতিদের নাম ঘোষণা ঘিরে, দফায় দফায় অশান্ত হয়ে ওঠে কেশপুর। আর এবার, কেশপুর ব্লক পার্টি অফিসে পৃথক পৃথকভাবে তালা ঝোলালেন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকরা।


এদিন দেখা যায়, কেশপুরের ব্লক তৃণমূল পার্টি অফিসের প্রধান গেটে তিনটে তালা রয়েছে। প্রথম তালা লাগানোর পর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী আরেকটা তালা দিয়ে দেয়। ২৪ ঘণ্টা তালাবন্ধ রইল পার্টি অফিস।

কিন্তু ঠিক কী কারণে এই অশান্তি?

সম্প্রতি, কেশপুর ব্লকের ৪টি অঞ্চলের সভাপতির নাম ঘোষণা করেন, ব্লক সভাপতি। নিজের লেটারহেডে, ৪, ১০, ১২ ও ১৩ নম্বর অঞ্চলের সভাপতির নাম ঘোষণা করে দেন প্রদ্যোত্‍ পাঁজা। ব্লকের ৩ সহ সভাপতির অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সভাপতি। এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই, শুক্রবার বিকেলে ১০ নম্বর অঞ্চলের নতুন সভাপতি, শেখ সফিউর রহমান, তালা ভেঙে পার্টি অফিসে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে তুমুল উত্তেজনা বাধে। ভাইরাল হয়েছে সেই মুহূর্তের ভিডিও।

এই অশান্তির পর, শনিবার, ব্লক পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় ব্লক সভাপতির অনুগামীরা। পাল্টা আরও ২ টি তালা দিয়ে দেন, সহ সভাপতিদের অনুগামীরা। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তালাবন্ধ হয়ে থাকে কেশপুর ব্লক তৃণমূলের অফিস। শুধু ব্লক পার্টি অফিসই নয়, ১০ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল পার্টি অফিসেও তালা ঝোলানো হয়।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে নিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কেশপুরের তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, 'দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। অজিত বাবুকে। শোনার সঙ্গে সঙ্গে চাবি খুলে দিতে বলেছেন। দলের কেউ যদি করে, কঠোর হাতে মোকাবিলা করা হবে। সর্ষের ভিতর ভূত থাকলে, ভূতকে সরাতে হবে।'


এনিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকে জেলা নেতৃত্ব। জেলা পরিষদের দফতরে হয় বৈঠক। এদিকে, জেলা পরিষদের দফতরে বৈঠক চলাকালীন, বিধায়ক শিউলি সাহার বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। শ'খানেক তৃণমূল কর্মীকে সরাতে প্রায় হিমশিম খেতে হয় জেলা নেতৃত্বকে। এদিকে, তৃণমূলের বিবাদ মেটাতে কেন জেলা পরিষদে বৈঠক করা হল? এই প্রশ্ন তুলে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসককে ই-মেল করেছে বিজেপি।


আরও পড়ুন: Awas Yojana Scam : প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় নিশীথ প্রামাণিকের বাবার নাম ! 'চক্রান্ত' দাবি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি সমিতকুমার দাস বলেন, 'কার্যত দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। প্রথমে সভাপতি চাবি লাগালেন। তারপর সহ সভাপতির গোষ্ঠী চাবি লাগাল। তোলার ভাগ কাকে দেবে, সেই লড়াই ছাড়া কিছু না।'


এলাকায় উত্তেজনা থাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।