মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেতুগ্রাম: সরকারি চাকরি পাওয়ার খবরে ডান কব্জি কেটেছে স্বামী। হাত হারিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কেতুগ্রামের রেণু খাতুন। ৪ বছরের প্রেমের পর বিয়ে করেছিলেন শের মহম্মদকে। যে হাত ধরে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন সেই হাতেই এল কোপ। আহত রেণুর এখন লক্ষ্য বাঁ হাতে ভর করেই নতুন লড়াই শুরু করা। 


লক্ষ্য ছিল নার্সের চাকরি করে সাধারণ মানুষের সেবা করা। কিন্তু সেই ভাবনায় কিছুটা বদল এনেছে স্বামীর অতর্কিত হামলা। পুলিশের জালে ধরা পড়েছে অভিযুক্তরা। রেণু চান তাঁরা সারাজীবনের জন্য উপযুক্ত শাস্তি পান। কোনওদিন যেন জেলের বাইরের জীবন দেখতে না পান তাঁর স্বামী ও দুই অভিযুক্ত! পাশবিক এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। স্বাস্থ্যসাথীর পাশাপাশি রেণুর বাদ যাওয়া ডান হাতে কৃত্রিম হাত বসাতে সাহায্য করবে সরকার। সময়সাপেক্ষ সেই লড়াইও দাঁতে দাঁত চেপে করতে রাজি রেণু। হাত হারিয়েছেন ঠিকই, তবে হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। প্রতিদিন সকালে উঠে বাঁ হাতে লেখা প্র্যাকটিস চালিয়েও যাচ্ছেন। আগামী দিনে তাঁর মতো অত্যাচারিত হওয়াদের পাশে থাকার লক্ষ্যেই তৈরি করছেন নিজেকে। 


ছোটবেলা থেকে যে ডানহাতে কলম ধরেছেন বাঁ হাতে লিখছে- I proud myself becaue I am a nurse। সেই হাতের আঙুলগুলোই আর নেই। একটা ঘটনা ছারখার করে দিয়েছে সব অভ্যেস। কিন্তু তিনি দমবার পাত্রী নন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, হাত কাটলেও, কাড়া যাবে না তাঁর প্রাণশক্তি, কাজের প্রতি ভালোবাসা।  


আরও পড়ুন, ‘৮ বছর আগে দেশে কথায় কথায় দুর্নীতি হত, দেশে বদল হয়েছে, বাংলাতেও হবে', বার্তা নাড্ডার


অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন তাঁকে নার্সের চাকরি তো দেওয়া যাবে না। তবে নার্সিং গ্রেডের চাকরি পাবেন। বেতন পাবেন ২৯ হাজার ৮০০ টাকা। পাশাপাশি কৃত্রিম হাতেরও বন্দোবস্ত করে দেবে সরকার এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই আশাতেই এখন দিন গুজরাচ্ছেন রেণু।   


এদিকে, চিকিৎসক জানান রেণুর হাতের ক্ষত সেরে গিয়েছে অনেকটাই। কমেছে ব্যথাও। তবে মাসখানেক সময় লাগবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। কৃত্রিম হাত নিয়ে সুস্থ হলেও ট্রেনিং চলবে আরও অনেকদিন। কিন্তু জীবনে যে ক্ষত রয়ে গেল, তা কি অপূরণীয়? লড়াই করেই সে উত্তর পেতে চান কেতুগ্রামের রেণু খাতুন!