সন্দীপ সরকার, কলকাতা : অসম বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষায় অঙ্ক-সহ ৪টি বিষয়ে ১০০-তে ১০০। আইআইটির (IIT) সর্বভারতীয় প্রবেশিকায় একাদশতম স্থান। তারপর খড়গপুর আইআইটিকে (IIT Kharagpur) উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নেওয়া ! ফয়জান আহমেদকে ঘিরে স্বপ্নের জাল বুনছিলেন তাঁর মা। কিন্তু, মেধাবী ছেলের আকস্মিক মৃত্যু নিদারুণ বেদনার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে তাঁকে !


অঙ্কে ১০০-য় ১০০ পাওয়া ছেলেটার, জীবনের অঙ্কটা মিলল না ! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় যখন চারপাশে তোলপাড় চলছে, তখন খড়গপুর আইআইটি-তে পড়তে আসা ফয়জান আহমেদের মর্মান্তিক পরিণতির বিষয়টি দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।

ফয়জান আহমেদ। অসমের তিনসুকিয়ার অতি সাধারণ পরিবারের এই সন্তানের সংক্ষিপ্ত জীবন। কিন্তু স্বপ্ন ছিল সুবিশাল। তার পরিবার সূত্রেই জানা গেছে, অসমের দোহাটিয়া কলেজে ক্যান্টিন চালাতেন ফয়জানের মা। ফয়জান যখন ক্লাস সেভেনে, সেই সময় দোহাটিয়া কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন দিল্লি আইআইটি-র এক প্রাক্তনী। তাঁর কাছেই আইআইটি-র জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শোনেন ছোট্ট ফয়জান। তখন স্কুলে পড়লেও, ততদিনে তার মন এই দেশের এলিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। পড়াশোনায় এতটুকু ফাঁকি ছিল না।


ফয়জানের প্রিয় বিষয় ছিল অঙ্ক। অসম বোর্ডের ক্লাস টেনের পরীক্ষায় অঙ্কে ১০০-য় ১০০ পেয়েছিল সে। সঙ্গে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি - সবেতেই ১০০ পেয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। এরপর ফয়জনের ক্লাস টুয়েলভ। সেই পরীক্ষাতেও আশি শতাংশের বেশি নম্বর পায় ফয়জান। সবচেয়ে বড় হার্ডল ছিল আইআইটির প্রবেশিকা। কিন্তু, ফয়জানের অধ্যাবসায় ফের কামাল করল। গোটা ভারতের মধ্যে আইআইটি প্রবেশিকার রাঙ্কিংয়ে ১১ তম স্থান পেলেন ফয়জান। এত ভাল রেজাল্ট করা ফয়জানের সামনে সুযোগ ছিল, তাঁর নিজের রাজ্য গুয়াহাটি কিংবা, দিল্লি-মুম্বই-সহ দেশের যে কোনও প্রান্তের অভিজাত আইআইটি-তে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু, ফয়জান বেছে নেন খড়গপুর আইআইটি-কে।


২০২২ -এর ১১ অক্টোবর থেকে খড়গপুর IIT-র তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ফয়জান আহমেদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।
ঠিক ৩ দিন পরে হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় মেধাবীর মৃতদেহ ! তারপর সব তোলপাড় !


ছোটবেলা থেকে মনের মধ্যে সযত্নে লালিত-পালিত আশা বুকে নিয়ে বাংলায় এসেছিলেন ফয়জান। কিন্তু, এখান থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে মৃতদেহ ! স্বপ্নের শবদেহ !


আরও পড়ুন ; 'IIT কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ নিলে, যাদবপুরের পড়ুয়াকে এভাবে চলে যেতে হত না', আক্ষেপ ফয়জানের মায়ের