বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: পুলিশ সেজে অভিনব কায়দায় গলার সোনার হার এবং আংটি ছিনতাই করল দুই দুষ্কৃতী। খড়গপুর লোকাল থানার অন্তর্গত মোহনপুর কাঁসাই ব্রিজের কাছে মঙ্গলবার দুপুর তিনটে নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ এখনো অবধি খোঁজ পায়নি দুষ্কৃতীদের। 


ঠিক কী ঘটেছে? 


মঙ্গলবার দুপুর তিনটে নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর লোকাল থানার অন্তর্গত সতকুইয়ের বাসিন্দা, রামপদ জানা স্কুটি নিয়ে বাড়ি থেকে অনতিদূরে মোহনপুর কাঁসাই ব্রিজের কাছে ফল কিনতে যান। ফল দোকানের আগে গাড়ি দাঁড় করাতে পুলিশের মত জংলা ছাপ দেওয়া জ্যাকেট পড়ে এক যুবক এগিয়ে আসে। ওই যুবক, রামবাবুকে গাড়িটি সাইড করে রাখতে বলে। এরপর জিজ্ঞেস করেন তিনি কেন হেলমেট পড়েননি! 


রাম বাবু যুবকের পরিচয় জানতে চাইলে পুলিশের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ওই যুবক গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষাও করে। ড্রাইভিং লাইসেন্সও পরীক্ষা করে। রামবাবু ওই যুবককে কোন থানার পুলিশ জানতে চাইলে যুবকটি জানায় স্পেশাল ড্রাইভ চলছে। তাদের মত অনেক দল চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 


এরপর ওই যুবক রামবাবুকে সতর্কও করে। 'চারদিকে ছিনতাই হচ্ছে আপনি গলায় সোনার হার, হাতে আংটি পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওগুলো খুলে রাখুন' এই সতর্কবার্তা দেওয়ার পর নিজের থেকে একটা কাগজও দেন বলে জানিয়েছেন রামপদ জানা। এরপর কাগজে মুড়ে রামবাবু গলার সোনার হার, আংটি প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন।


এরপরই ঘটে যায় ম্যাজিক। হার, আংটি ঠিকমত রেখেছেন কিনা পরীক্ষা করার জন্য প্যান্টের পকেটে হাতও ঢোকায় যুবকটি। এরপর সঙ্গীর বাইকে চেপে মেদিনীপুরের দিকে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায়। রামবাবু সঙ্গে সঙ্গেই প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফের কাগজে মোড়া আংটি এবং সোনার হার পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন হার ও আংটি উধাও হয়ে গিয়েছে। তার বদলে নুড়ি পাথর কাগজে মোড়া আছে। কীভাবে সোনার হার ও আংটি ভ্যানিস হয়ে গেল ঘটনার পরেরদিনও সে কথা বুঝতে পারছেন না রামপদ জানা।


আরও পড়ুন, বিয়েতে কোটি টাকা ভর্তি সুটকেস, বিলাসবহুল গাড়ি, পুরোহিতকে ১১ লক্ষ দান! 'এত পয়সা কীভাবে'? প্রশ্ন নেটিজেনদের


রামপদ জানা বলেন, 'মাঝেমধ্যে ফল নিতে দুপুরের দিকে মোহনপুরে যাই। মঙ্গলবার দুপুরেও সেভাবেই গেছিলাম। এইরকম হবে ভাবতে পারিনি। পুলিশের জংলা ছাপের জ্যাকেট পরা যুবকের সঙ্গী আমার পিছনে ছিল। তার বাইকটিকেও ওই যুবক দাঁড় করায় এবং কাগজপত্র পরীক্ষা করে। কীভাবে কাগজে মোড়া গলার সোনার হার আর আংটি ভ্যানিস হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিশও চেষ্টা করছে দেখা যাক কী হয়।'


ফল বিক্রেতা উত্তম ঘোষ বলেন, একজন ক্রেতা এসে বলে দাদা ডাব পাওয়া যাবে। তার পিছনে একজন এসে বলে দাদা আপনার গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। এগিয়ে নিয়ে গিয়ে কাগজপত্র দেখার পরে নিজেদের পরিচয় পত্র দেখায় পুলিশ বলে। তারপর ভদ্রলোককে বললেন রাস্তার ধারে আপনি এত সোনার জিনিস পরে ঘুরছেন। গলার চেন হাতের আংটি খুলে রাখুন। তারপর তাদের হাতের কায়দা করে তারা পাথর রেখে দিয়ে সোনার জিনিসগুলো নিয়ে চলে যায়। ভদ্রলোককে ছেড়ে দিয়ে ওরা দুজন মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। নিজেদের পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেয় জংলা ছাপ জ্যাকেট পরেছিল।'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে