ঝিলম করঞ্জাই ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ঠিক সময়ে CPR দেওয়া হলে, সঙ্গীতশিল্পী কে কে’ (KK) কে বাঁচানো যেত। ময়নাতদন্তকারী (Postmortem ) চিকিৎসকদের এমনটাই মত বলে SSKM হাসপাতাল সূত্রে খবর। কারণ, জরুরিকালীন (Emergency) পরিস্থিতিতে এই CPR-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরকম উদাহরণও রয়েছে।


অ্যানিমেশন বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন-তিন অক্ষরের একটি শব্দ। বিপদের সময় সাক্ষাৎ যেন দেবদূত। মুহূর্তের এই পদক্ষেপই, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে যে কাউকে। SSKM হাসপাতাল সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের মতে, হোটেলেই যদি গায়ক কে কে’কে CPR দেওয়া হত, তাহলে সম্ভবত প্রাণে বেঁচে যেতেন তিনি। 


ঠিক যেমনটা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় দু’দশক আগে জাকার্তার আশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের হাইভোল্টেজ ম্যাচ। সতীর্থ ডগলাস দ্য সিলভার CPR’এ মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এসেছিলেন দেবজিৎ ঘোষ। কার্যত পুনর্জন্ম হয়েছিল লাল হলুদ ডিফেন্ডারের। প্রাক্তন ফুটবলার দেবজিৎ ঘোষ বলেন, "একবার আমার বন্ধুর জন্য নিজে বেঁচে ফিরেছি, একবার কোচ ছিলাম তখন একজনকে বাঁচিয়েছিলাম।" 


আরও পড়ুন, কেন নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না? কে কে-র মৃত্যুর পর প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে


২০১৭’র ফেব্রুয়ারিতে চেক প্রজাতন্ত্রের ঘরোয়া ফুটবল টুর্নামেন্টে CPR করে স্লোভাকোর স্ট্রাইকারের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বিপক্ষ টিমের গোলরক্ষকের। গত বছরের ইউরো কাপে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সংজ্ঞা হারান এরিকসেন। CPR-এর মাধ্যমে প্রাণ বাঁচে তাঁর।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঙ্গীতশিল্পী KK যখন অস্বস্তি বোধ করছিলেন, তৎক্ষণাৎ তাঁকে CPR দেওয়া হলে বিপদ হয়তো এড়ানো যেত। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তাপস রায়চৌধুরী বলেন, "সবার জানা উচিত...স্কুলে স্কুলে শেখানো উচিত।"  


SSKM হাসপাতাল সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ হৃদরোগে কে কে’র মৃত্যু হয়নি। মৃত সঙ্গীতশিল্পীর কোনও ধমনিতে একশো শতাংশ ব্লকেজ ছিল না। তবে, একাধিক ধমনির বেশ কয়েকটি জায়গায় ছোট ছোট ব্লকেজ ছিল। সব থেকে বেশি ব্লকেজ ছিল বাঁ দিকের মূল ধমনিতে। এখানে সত্তর শতাংশ মতো ব্লকেজ ছিল। মানুষ উত্তেজিত হলে শরীরে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয়। তার ফলে, ধমনিতে খিঁচ ধরে। আর এতে সত্তর শতাংশ ব্লকেজ মুহূর্তের জন্য একশো শতাংশে পরিণত হয়ে যায়। এতেই হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। যাকে বলে অ্যারিদমিয়া।


চিকিৎসকরা বলছেন, এই অ্যারিদমিয়ার জন্য অজ্ঞান হয়ে যান কে কে। এর পর আর তাঁর হৃদযন্ত্র সচল হয়নি বলেই মত ময়নাতদন্তরারী চিকিৎসকদের। 


হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, "আমাদের হার্টে তিনটে করোনারি আছে। লেফট মেইন বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে, হার্টের পাম্পিংয়ের জায়গাগুলো বন্ধ হওয়া। ৭০ পার্সেন্ট ব্লক মানে ক্রিটিক্যাল ব্লক। এবার যদি অ্যাড্রিনালিন চার্জ হলে, আর্টারি সঙ্কুচিত হবে। নর্মালের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না। যার ৭০ শতাংশ ব্লক, তার তো পুরোটাই বন্ধ হবে।


পুলিশ সূত্রে খবর, কে কে’র হোটেলের ঘর থেকে গ্যাসস্ট্রিক ও লিভারের রোগের ১০টির বেশি ওষুধ পাওয়া গেছে। হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ওষুধও পাওয়া গেছে। পুলিশকে পরিবার জানিয়েছে, কে কে প্রচুর অ্যান্টাসিড খেতেন। সোমবার কে কে তাঁর ম্যানেজারকে জানিয়েছিলেন, তিনি এনার্জি পাচ্ছেন না। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তাঁর কাঁধ ও হাতে ব্যথা হচ্ছে।


ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ শোভনকুমার দাস, "৭০ শতাংশ ব্লক হলে, সঙ্গে সঙ্গে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হবে তা না। হার্ট মাসেলে অক্সিজেন সাপ্লাই কম হচ্ছে। এই অবস্থায় অ্যাডরিনালিন প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে। কম্প্রোমাইজড কন্ডিশনে যে আছে, সেখানে হার্ট বেশি কাজ করলে অক্সিজেন ডিমান্ড বাড়বে। তখন কার্ডিয়াক ডিস ফাকশন হয়। সিভিয়ার ইস্কেমিয়া হয়।"