পার্থপ্রতিম ঘোষ এবং আবির দত্ত, কলকাতা: দিকে দিকে প্রতারণার ফাঁদ। একটু অসতর্ক হলেই অনেককে খোয়াতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। আধারের বায়োমেট্রিক নকল করে প্রতারণার পাশাপাশি, নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে টেলিগ্রাম ফ্রড ও ক্রিপ্টো ট্রেডিং প্রতারণাও। (Adhaar Fraud)


যখন তখন অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা। আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক (Biometric) তথ্য হাতিয়ে প্রতারণার একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর প্রতারণার এই নয়া পন্থা ঘুম উড়িয়ে দিচ্ছে পুলিশ প্রশাসনেরও। কয়েকমাসের মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশের কাছেই জমা পড়েছে এরকম ৬৬ টি অভিযোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে তোলা হচ্ছে টাকা। 


যেসব জায়গায় এটিএমের (ATM) সংখ্যা কম থাকায় কিয়স্কের সংখ্যা বেশি, সেই সমস্ত জায়গা থেকেই বায়োমেট্রিক হাতিয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে টাকা। যদিও এখনও পর্যন্ত এই ধরণের প্রতারণার অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে, আধারের বায়োমেট্রিক লক করার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। 


কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, 'এম আধার ডাউনলোড করে বায়োমেট্রিক লক করুন। কাছাকাছি পুলিশ স্টেশনে যান। অভিযোগ জানান।' অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী বলেন, 'এম আধারই শুধুমাত্র নয়, আধারের ওয়েবসাইটে গিয়ে এগুলো করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে লক করলে রেশন তোলার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আনলক করে কাজটা সেরে ফেলুন।' 


আধার প্রতারণার শিকার হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের তরফে। কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটেও আধার প্রতারণা নিয়ে ২ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। 


একদিকে যখন, আধার কার্ড প্রতারণা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সাধারণ মানুষ, তখন নতুন করে ভাবাচ্ছে টেলিগ্রাম প্রতারণাও। এই ধরণের প্রতারণার ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা হচ্ছে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে। সেখানে পাঠানো ইউটিউব ভিডিওর লিঙ্কে ক্লিক করলে কখনও ২০০ কখনও বা ৩০০ টাকা জেতার টোপ দেওয়া হচ্ছে। 


কিন্তু, লিঙ্কে ক্লিক করলেই অ্য়াকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা।  এখনও পর্যন্ত টেলিগ্রাম প্রতারণায় বিধাননগর কমিশনারেটে দায়ের হয়েছে ২৫ টি অভিযোগ। সাড়ে ৫ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতারিতরা। 


এখনও পর্যন্ত এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এডিসিপি ডিডি চারু শর্মা বলেন, 'অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে জবাব না দেওয়াই ভালো। কোনও গ্রুপে জয়েন করা হলে বেরিয়ে যান।' 


আধারের বায়োমেট্রিক নকল করে প্রতারণা, টেলিগ্রাম ফ্রডের পাশাপাশি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে 'ক্রিপ্টো ট্রেডিং' প্রতারণাও। এতে টাকা লগ্নি করলে অনেক বেশি অঙ্কের টাকা ফেরত পাওয়ার টোপ দেওয়া হচ্ছে। ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন অনেকেই। তাই এই ধরণের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে আরও বেশি সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের।