করুণাময় সিংহ, কমলকৃষ্ণ দে ও রাজীব চৌধুরী: চুরির ফোন কেনা নিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ডেকে, অশোক সিংহকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। বুধবার সন্ধে ৬টা বেজে ৯ মিনিট থেকে ৬টা বেজে ১১ মিনিটের ফুটেজ কোথায়, প্রশ্ন তুলেছে গেরুয়া শিবির। কংগ্রেসের দাবি, নিরপেক্ষ কোনও সংস্থা তদন্ত করুক। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ তৃণমূলের। (Amherst Street Case)


রহস্য়ে মোড়া ২ মিনিট। কী হয়েছিল ওই ১২০ সেকেন্ডে? কী এমন ঘটেছিল, যে, সুস্থ একজন থানায় ঢুকলেন, আর সেখান থেকে অচৈতন্য অবস্থায় বের করতে হল তাঁকে? আমহার্স্টস্ট্রিট থানায় অশোক সিংহ নামের বছর ৪২-এর ব্য়ক্তিকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ঘিরে জোরাল হচ্ছে এই প্রশ্ন। বিজেপি-র তরফেও একই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। (Kolkata News)


বুধবার সন্ধেয় যখন উত্তাল পরিস্থিতি কলেজ স্ট্রিটে, সেই সময়ই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তিনি বলেন, "৬টা বেজে ৯ থেকে ১১ মিনিট, অচৈতন্য অবস্থায় বার করা হয়। এটা দেখাতে পারবে। কিন্তু মাঝের ২ মিনিটই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা দেখাতে পারবে না। কারণ আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ওই ঘরে সিসিটিভি নেই। নিহতের পরিবারকে নিয়ে গেল দেখাব বলে, তার পর সাদা কাগজ দিয়ে বলল সই করে দাও। পুলিশ একবার দেখিয়ে দিক না!"


আরও পড়ুন: Amherst Street Case: ‘মস্তিষ্কে টিউমার ছিল, ম্যালিগন্যান্সির চিকিৎসা চলছিল’, আমহার্স্ট স্ট্রিট কাণ্ডে বলছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট

পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে,বুধবার বিকেল ৫টা বেজে ৫ মিনিটে, অশোক সিংহকে ফোন করে স্থানীয় থানায় চুরির মোবাইল ফোন জমা দিতে বলা হয়। এর পর মদন লাল নামে এক বিজেপি নেতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন ওই ব্যক্তি। জানান, ফোন জমা দিতে আসছেন। তার পর বিজেপি নেতা থানায় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ভিপি সাউকে ফোন করে জানান, অশোক সিং থানায় ফোন জমা দিতে যাবেন।

সেই মতো বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে, CCTV ক্যামেরার ফুটেজে ওই ব্যক্তিকে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ঢুকতে দেখা যায়। ২ মিনিট পর বেরিয়ে যান, তারপর আবার থানায় ফিরে আসেন। থানা থেকে সন্ধে ৬টা ২ ও ৬টা ৫ মিনিটে বিজেপি নেতাকে দু'বার ফোন করেন অশোক। এর পর বিজেপি নেতা সার্জেন্টকে ফোন করে জানান, অশোক সিংহ থানায় পৌঁছে গিয়েছেন।

সন্ধে ৬টা ৯ মিনিটে এক সাব ইন্সপেক্টর, কিছু প্রশ্ন করলে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যান অশোক। সন্ধে ৬টা ১১ মিনিটে থানা থেকে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত ঘোষণা করা হয় তাঁকে। এ নিয়ে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, "একজন নিরীহ লোককে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, খুব অন্যায়। পুলিশের নামে FIR করা উচিত। শাস্তি হওয়া উচিত ওদের।"

গোটা বিতর্কে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও ঘটেছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তদন্ত করলে, গল্প ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। নিরপেক্ষ কোনও সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করানো উচিত। মানবাধিকার কমিশনে যাওয়া উচিত পরিবারের।"

সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "রোমহর্ষক ঘটনা। খাস কলকাতায় দিনের বেলা পুলিশ ডেকেছে। তার প্রেক্ষিতে জলজ্যান্ত যুবক এসেছেনও। ব্যাস!!! থানায় মারা গেলেন? তদন্ত হতেই হবে। পরিবার বলছে, পুলিশের তদন্তে বিশ্বাস নেই। CBI চায়। রাজ্য সরকারের পোস্ট মর্টেমে বিশ্বাস করছে না। বেসরকারি পোস্টমর্টেম চাইছে। কী বীভৎস ব্যাপার বুঝতে পারছেন? রাজ্যের পুলিশ এবং সরকারের উপর থেকে বিশ্বাস কমছে।"


যদিও বিরোধীরা মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ বলে অভিযোগ পরিবারের। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, "নেই কাজ তো খই ভাজ। মারা যাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়ষ কিন্তু এর সঙ্গে পুলিশের কোনও ব্যাপার নেই, অন্তত আমি যতদূর শুনেছি। হতে পারে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন ভদ্রলোক। সব জায়গায় অরাজকতা। যে মারা যাচ্ছে ধরছে, ফাঁস লাগালেও ধরছে। এতে খুব বেশি ফল পাবে বলে মনে হচ্ছে না। তার থেকে গঠনমূলক রাজনীতিতে মানুষ বেশি বিশ্বাস করেন। এই নেগেটিভ রাজনীতির যুগ শেষ।" তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে, এদিন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে ডেপুটেশন দেয় APDR.