কলকাতা: ফের বিসি রায় শিশু হাসপাতালে শিশুমৃত্যু। একদিনে ৭ জন শিশুর মৃত্যু। মৃত্যু হল গোবরডাঙার বাসিন্দা ৬ মাসের শিশুর। ১১ দিন ধরে ভর্তি ছিল বিসি রায় হাসপাতালে। বনগাঁ হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছিল শিশুকে।
রাজ্য জুড়ে বাড়ছে অ্যাডিনো আতঙ্ক! বি সি রায় হাসপাতালে ১৩ ঘণ্টায় আরও ৭ শিশুর মৃত্যু। এই নিয়ে ২ মাসে রাজ্যে ৯৫ জন শিশুর মৃত্যু হল। যে সব হাসপাতালে শিশুদের বহির্বিভাগ নেই, সেখানে অ্যাাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস ক্লিনিক খোলার জন্য পাঠানো হচ্ছে বাড়তি চিকিৎসক। জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সচিব।
অ্যাডিনো আতঙ্কের মধ্যেই হাসপাতালে ভয়াবহ ছবি। একাধিক পরিবারের দাবি, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে শিশুর। তার মধ্যেই মারণ রোগের বিরুদ্ধে অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ।
একের পর এক মৃত্যু! একের পর এক মায়ের কোল খালি! জীবন-যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে খুদেরা! রাজ্য জুড়ে মারণ থাবা বসিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস! বি সি রায় হাসপাতাল সূত্রের খবর, ভয়াবহ অ্যাডিনো-আতঙ্কের মধ্যে রবিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত মাত্র ১৩ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭ শিশুর।
মঙ্গলবার জ্বর, নিউমোনিয়া থাকায় বি সি রায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বনগাঁ মালঞ্চর বাসিন্দা চারমাসের শিশুকে। ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন রবিবার ভোর ৪টে নাগাদ তার মৃত্যু হয়। একইসঙ্গে সকাল ৬টা নাগাদ বি সি রায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা ১ বছর ৭ মাসের শিশুকন্যার। জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৮ দিন ধরে ভর্তি ছিল ওই শিশু। অন্যদিকে, দেগঙ্গার বাসিন্দা আড়াই মাস বয়সী শিশুকন্যা সোমবার থেকে বি সি রায় হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি ছিল। দুপুর ১টা নাগাদ তার মৃত্যুু হয়।
এ ছাডাও মৃত্যু হয়েছে দেগঙ্গা, বসিরহাটের বাসিন্দা দুই শিশুর। গোবরডাঙার বাসিন্দা এক ৬ মাসের শিশুকন্যারও এদিন মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারান স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন তিনি। শিশু মৃত্যু নিয়ে খবর করাতেও আপত্তি জানান স্বাস্থ্য অধিকর্তা। পরে তিনি দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
সব মিলিয়ে গত ২ মাসে মৃত শিশুর সংখ্য়া বেড়ে দাঁড়াল ৯৫! সূত্রের খবর, তার মধ্যে বি সি রায় শিশু হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে ৪০ জন শিশুর। আরজি কর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে ২৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর, ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এ মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। পিয়ারলেস হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন শিশু সদনেও শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে খবর। বাঁকুড়া জেলা হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে, পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতাল ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও মৃত্যু হয়েছে একাধিক শিশুর।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব, নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, পরিস্থিতিত ওপর নজর রাখা হয়েছে। যে সব হাসপাতালে শিশুদের বহির্বিভাগ নেই, সেখানে অ্যাাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস ক্লিনিক খোলার জন্য বাড়তি চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে। প্রয়োজনে ছুটির দিনেও তাঁরা এমার্জেন্সিতে থাকবেন। একদিকে, বাড়ছে সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যু। অন্যদিকে, শিশুমৃত্যুর পর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে অনেক দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। তা নিয়েও বাড়ছে ক্ষোভ।