সৌমিত্র রায়, কলকাতা: বেসরকারি সংস্থার চাকরি। রবিবার ছুটি থাকে না। তবে আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছিল। তাই বাড়ি ফেরার আগে মায়ের সঙ্গে দেখা করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গাড়ির নীচে চাপা পড়ে বেঘোরে মৃত্যু হল মহিলার (Woman Killed)। মায়ের সঙ্গে দেখা তো হলই না, দুই তরুণী কন্যার মুখও দেখা হল না মৃতার (Kolkata News) ।
অফিস থেকে ফেরার পথে শহরে গাড়ি চাপা পড়লেন মহিলা
রবিবার দুপুরে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা (Ballygunge Accident) ঘটে গিয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি পর পর দু’টি গাড়িতে ধাক্কা মেরে পিষে দিয়েছে ওই মহিলাকে। মৃতাকে স্বস্তি দাস বলে শনাক্ত করা গিয়েছে। বয়স ৪৪ বছর। পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা তিনি। তাঁর মা, চিন্তা রজকের আক্ষেপ, ‘‘আমাকে ফোন করে বলল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছে। আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছিল। হল না।’’
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। সংসারে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি মাসেই স্বামীকে হারান স্বস্তি। পিকনিক গার্ডেনে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকেন। দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ১৭ এবং ২০ বছর। দু’জনেই পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়াও আহিরিপুকুরে বাপের বাড়িতে থাকা বিধবা মা এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম দাদার দায়িত্বই তাঁর কাঁধেই ছিল। বেসরকারি সংস্থার সামান্য বেতনের চাকরিতেই কোনও রকমে চালাচ্ছিলেন স্বস্তি (Kolkata Road Accident)।
আরও পড়ুন: Kolkata News: শহরের রাস্তায় বেপরোয়া জয়রাইড, ভরদুপুরে বালিগঞ্জে পিষে মৃত্যু মহিলার, আটক চালক
কিন্তু এ দিন বিকেলে অফিস থেকে বেরনোর পর না মায়ের সঙ্গে দেখা হল তাঁর, না ফেরা হল বাড়িতে। দুই সংসারের একমাত্র রোজগেরে স্বস্তিকে পিষে দিয়ে গিয়েছে বহুমূল্য, বিলাসবহুল গাড়ি। মৃতের দাদা রাজেশ রজক তাই বলেন, ‘‘ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিল ও। তার পরেও এই ঘটনা। পুলিশ জবাব দিক।’’ চোখের সামনে এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য ঘটতে দেখে স্তম্ভিত বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের মানুষ জনও।
শহরের রাস্তায় ফের দুরন্ত গতির গাড়ি
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘাতক জাগুয়ার গাড়িটি দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছিল।প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ঘাতক গাড়িটি প্রথমে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। তারপর, পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কালো রংয়ের BMW-র সামনের দিকে সজোরে ধাক্কা মারে। সেই সময়, কালো গাড়িটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন স্বস্তি। দু’টি গাড়ির মাঝে পড়ে যাওয়ায়, তাঁকেও পিষে দেয় জাগুয়ারটি। গাড়ির প্রায় নীচে ঢুকে যান তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। কিন্তু শহরের রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের তোয়াক্কা না করে, চালক দুরন্ত গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে নিয়ে গেলেন কী ভাবে, উঠছে প্রশ্ন।