পার্থপ্রতিম ঘোষ, হিন্দোল দে ও অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : পে লোডারের ধাক্কায় পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বাঁশদ্রোণী। মহালয়ার সকালে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল নবম শ্রেণির এক পড়ুয়ার। প্রতিবাদে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ, উত্তেজনা ছড়াল বাঁশদ্রোণী এলাকায়। পাটুলি থানার ওসিকে নামানো হল কাদা জলে। উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ কর্মীদের কলার ধরে হুঁশিয়ারি দিল উত্তেজিত জনতা। শেষমেশ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পুলিশ অফিসারদের উদ্ধার করলেন যিনি, তিনি নিজেকে বিজেপি কর্মী বলে পরিচয় দিলেন। যদিও তিনি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত এলাকায়। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনায় চারটি এফআইআর হয়েছে। পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও খোঁজ চলছে ঘাতক পে লোডারের চালকের।


মর্মান্তিক মহালয়ার ভোর ! মায়ের আসার আগেই খালি হয়ে গেল এক মায়ের কোল। পথ দুর্ঘটনায় নবম শ্রণির পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বাঁশদ্রোণী। সকাল থেকে সন্ধে অবধি চলল উত্তেজনা। 


বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ বাঁশদ্রোণীর দীনেশনগরে কোচিংয়ের সামনে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নবম শ্রেণির পড়ুয়া সৌম্য শীল। আচমকা একটি পে লোডার পিষে দেয় ছাত্রকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ১৫ বছরের কিশোরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এরপরই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। ঘাতক পেলোডারে উঠে চলে ভাঙচুর। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে তাদের ঘিরেও চলে তুমুল বিক্ষোভ। 
পাটুলি থানার ওসি-কে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখেন স্থানীয়রা। তাঁকে কাদাজলে নামিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে তুমুল ধস্তাধস্তি।


OC-কে আটকে রাখা, কাদাজলে নামিয়ে বিক্ষোভ, তাড়া করে ধাক্কাধাক্কি, কলার ধরে হুঁশিয়ারি। এভাবেই ক্ষোভের মুখে পড়ল পুলিশ। জনতার রোষের মুখে পড়ে, বাঁশদ্রোণীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রইলেন একাধিক পুলিশ অফিসার।


মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্কুল পড়ুয়ার মৃত্য়ুর পর সকাল থেকেই পাটুলি থানার ওসিকে ঘিরে ধরে বাঁশদ্রোণীতে তুমুল বিক্ষোভ চলে। কাদা জলের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ আধিকারিককে। পাটুলি থানার OC-কে ঘেরাও করে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা প্রশ্ন তোলেন, তাঁর এলাকা না হওয়া সত্ত্বেও, কার নির্দেশে এসেছেন ? আর জি কর কাণ্ডে তোলপাড়ের আবহে এই পাটুলি থানার ওসি-র সোশাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়। বুধবার বাঁশদ্রোণীর দুর্ঘটনার পর এলাকায় গিয়ে প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েন সেই ওসি। সাউথ সাব আর্বান ডিভিশনের স্পেশাল ফোর্স ওসি-কে উদ্ধার করতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের কলার ধরে হুঁশিয়ারি দেয় উত্তেজিত জনতা। 
গল্ফগ্রিন থানা, রিজেন্ট পার্ক ও বাঁশদ্রোণী থানার ওসিও দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকেন বিক্ষোভের মাঝে।  আবার পুলিশের বিরুদ্ধেও মারধরের অভিযোগ ওঠে। এমনকী মহিলাদেরও মারধর করে পুরুষ পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ পর, আচমকাই আটকে পড়া পুলিশ অফিসারদের উদ্ধারে নামে এই বাহিনী। বিক্ষোভকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর চড়াও হয় তারা। কিন্তু, এরা কারা? খবর করতে গেলে এবিপি আনন্দর ক্য়ামেরা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টাও হয়। প্রশ্নের মুখে প্রায় পালাতে পালাতে, এক ব্য়ক্তি নিজেকে বিজেপি কর্মী বলে দাবি করেন ! যদিও, স্থানীয় সূত্রে খবর, আদতে রাজু বসু নামে এই ব্য়ক্তি স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। 
সন্ধেয় অ্য়াসিস্ট্য়ান্ট পুলিশ কমিশনার ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখায় উত্তেজিত জনতা। শেষমেশ ডিসি এসএসডি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।