ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : গত বছর ৪ অগাস্ট বাবার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার সময় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বেহালার সৌরনীলের। সেই ঘটনার বছর পার, কিন্তু বেহালা চৌরাস্তা ফিরে গেছে আগের অবস্থাতেই ! নামেই আছে ড্রপ গেট বেরিয়ার, সাইনেজ ! ফুটপাথও ফের দখল ! যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই প্রাণ হাতে রাস্তা পারাপার করছেন সাধারণ মানুষ! 


বেহালায় ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের তরফ থেকে পথচারীদের ফুটপাথ ব্যবহারের নির্দেশ সম্বলিত সাইনেজ দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু, এদিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ফুটপাথের উপরেই বিভিন্ন দোকান-পাঠ বসে গেছে, অনেকে ব্যবসা করছেন। ফুটপাথ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। পুলিশ অফিসাররা প্রথমে সেখানে ফুটপাথ দখলমুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ফুটপাথের উপরেই ব্যবসায়ীরা ফুলের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকান বসিয়েছেন। পথচারীদের হাঁটার রাস্তা ক্রমশই অপরিসর হয়ে উঠছে। এছাড়া দুর্ঘটনার পর ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর ২টি ক্রসওভার গেট করা হয়েছে। কিন্তু এদিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি গেট বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। অন্য একটি গেট একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় বাঁধা অবস্থায় রয়েছে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো ট্রাফিককর্মী দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক আধিকারিকরা বললেন, কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। ফলে, সবকিছু করা হয়ে উঠছে না।


গত বছর কী ঘটেছিল ?


বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার পথেই শেষ হয়ে যায় সারাজীবনের পথচলা। বেপরোয়া লরি কেড়ে নিয়েছিল সাত বছরের একরত্তির প্রাণ ! আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বেহালার চৌরাস্তা। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ৬টা। বাবার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে আসছিল, বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সৌরনীল সরকার। প্রত্য়ক্ষদর্শীদের দাবি, অটো থেকে নেমে, সিগনাল দেখেই রাস্তা পেরোচ্ছিল বাবা-ছেলে। হঠাৎ, বেপরোয়া গতিতে আসা একটি লরি তাদের ধাক্কা দিয়ে সৌরনীলের মাথা ও তার বাবার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। লরির চাকায় পিষে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৭ বছরের একরত্তির। 


ঘটনার পরের দিন অনেকটাই বদলে যায় বেহালা চৌরাস্তার ছবি। যে ডায়মন্ড হারবার রোডে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই রোডের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পথচারীদের রাস্তা পারাপার, যান চলাচল ব্যবস্থার তদারকি করেন ডায়মন্ড হারবারে ওসি(ট্রাফিক) অমলেন্দু চক্রবর্তী। রাস্তার প্রত্যেক জায়গায় পুলিশ-প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়। রাস্তার পেরনোর জন্য যেসব জায়গা সেখানে একাধিক ড্রপগেট বসানো হয়। ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যেখান সেখান থেকে রাস্তা পেরনো যাবে না। জেব্রা ক্রসিং ধরে যাতে পথচারীরা রাস্তা পেরোন তা নিশ্চিত করে পুলিশ। বাস বা অটোয় ওঠার জন্য নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়ানো শুরু করেন যাত্রীরা। একবছর কাটতে না কাটতেই অবশ্যই সেই পরিস্থিতির বদল ঘটে গেছে।