ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আচমকা বিপত্তি। কলকাতার বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনে আজকের দিনেই এক রাতে ভেঙে পড়েছিল একের পর এক বাড়ি। সেটা ২০১৯ সালের ৩১ অগাস্ট। ওই রাতে একাধিক বাড়িতে বিপজ্জনক ফাটল দেখা দিয়েছিল। রাতদুপুরে কার্যত এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল বাসিন্দাদের। তার পর চার বছর কেটে গেলেও, এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি ঘরছাড়া মানুষগুলি। কবে বাড়ি ফেরা হবে তাঁদের? আদৌ ফেরা হবে তো? প্রশ্ন বউবাজার বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, এখনও ভাড়া বাড়িতে থাকা প্রায় ২০০টি পরিবারের। (Bowbazar Incident)


একটার পর একটা বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গেই, এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে ঘরে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি যেন চাপা পড়ে যাচ্ছে চার বছর আগে তাঁদেরই ভেঙে পড়া ঘরের ইট-পাথরের নীচে। কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাকরাপাড়া লেনেই ঘটে যায় অঘটন। টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময় বিপত্তি বাধে। ভেঙে পড়ে একাধিক বাড়ি। অনেক বাড়িতে ধরে বিরাট বিরাট ফাটল। (Kolkata Metro)


সেই রাতে বিপর্য়য় নেমে আসার পর, কয়েক পুরুষের ভিটে ছেড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উঠতে হয়, ভাড়া বাড়িতে। এখনও সেখানেই দিন কাটছে প্রায় ২০০টি পরিবারের। বাড়ি ফেরার আশা মাঝে সামান্য উজ্জ্বল হয়েছিল। কিন্তু ২০২২-এ ফের নেমে আসে বিপর্যয়। আদৌ কি বাড়ি ফেরা হবে মানুষগুলির? এই প্রশ্ন তুলে, বৃহস্পতিবার মোমবাতি হাতে বউবাজারে বিক্ষোভ দেখালেন বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা। মোমবাতি মিছিল থেকে বউবাজার মাটি ও মানব কল্যাণ সোসাইটির সম্পাদক সঞ্জয় সেনের গলায় দীর্ঘশ্বাস ধরা পড়ে। বলেন, "দু'বছরে ফিরিয়ে দেবে বলেছিল। জীবদ্দশায় ফিরতে পারব কিনা জানি না।"


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee : ইডি-র তদন্ত ও তল্লাশি আদালতের নজরদারিতে আনার আবেদন, কোর্টের দ্বারস্থ অভিষেক


দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাকরাপাড়া লেনের ওই বিপর্যয় স্থলে কারও দোতলা বাড়ি ছিল। কেউ বাড়ির নীচে চেম্বার করতেন। কারও আবার বাড়ির নীচেই ছিল ছাপাখানা। ভাড়া বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু মিলেছে ঠিকই। তবে এমন ভাবে তো থাকার কথা ছিল না? বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, পেশায় চিকিৎসক প্রদীপ লাহা বলেন, "বাড়ির নীচে চেম্বার ছিল। বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। মেট্রো থেকে ঘর দিয়েছিল। ঘুপচি ঘরে ডাক্তারি হয়? উপায় নেই।" ক্ষতিগ্রস্ত সুদীপ্ত শীল বলেন, "বাড়ির নীচে ছাপাখানা। মেশিন চুরমার। ঘর দিয়েছিল। ছাপাখানা করার ঘর পাইনি, মেশিন পাইনি। জনস্বার্থে করছে, আমরাও স্যাক্রিফাইস করছি। ক্ষোভের কথা।"

এই অনিশ্চয়তার শেষ কোথায়, আশা দেখাতে পারছেন না খোদ তৃণমূল কাউন্সিলরও। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে বলেন, "সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সত্যি বলতে কী , কবে হবে কেউ জানে না।" প্রতিশ্রুতি সত্যি হবে কবে? অপেক্ষায় ক্ষতিগ্রস্তরা।