ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বারবার সাবধানবাণী করা হচ্ছে। যে কোনও ফোন করতে গেলে, রিং হওয়ার আগে এই দীর্ঘ সতর্কবার্তা শুনতে বিরক্তিও প্রকাশ করছেন অনেকে। কিন্তু এই সচেতনতার বার্তার প্রচার এখনও কতটা জরুরি তার প্রমাণ কলকাতার এই ঘটনা। শহরে ফের ডিজিটাল অ্য়ারেস্টের শিকার হলেন এক দম্পত্তি। প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে ১৭ লক্ষ টাকা খোয়াল এক মধ্য়বিত্ত পরিবার।


শুভাশিস রায়। গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডের বাসিন্দা। একসময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বর্তমানে অসুস্থতার কারণে ঘরেই বসে। অভিযোগ, ১৯ ডিসেম্বর দিল্লি পুলিশের পরিচয় দিয়ে একজন ফোন করেন। বলা হয় তাঁর নামে SBI ব্য়াঙ্কে একটি ক্রেডিট কার্ড তোলা হয়েছে। যা থেকে লক্ষাধিক টাকা লোন নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায়, তাঁর নামে মামলা করা হয়েছে। ব্য়স এখান থেকেই ভয় দেখানো শুরু। অভিযোগ, প্রায় ১৪ দিন ধরে ভিডিও কলে নজরবন্দি রাখা হয় দম্পত্তিতে।


কীভাবে ফেলা হয় ফাঁদে ?


শুভাশিস রায়ের অভিযোগ, তাঁকে নানারকম ভাবে ভয় দেখানো হয়।  ইডির নামে নোটিস দেওয়ার কথা বলা হয়। হুমকি দেওয়া হয়, আর্থিক প্রতরাণা মামলায় যোগ পাওয়া গেছে, যার ফল মারাত্মক হতে পারে বলে।   ভিডিও কলে লাগাতার দেওয়া হয় হুমকি। তারপর ফোন আসে সিবিআই এর নাম করে।  সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নাম করেও ফোন আসে। এত কিছুর পরই মানসিকভাবে ত্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।


সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ


সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাষ চট্টোপাধ্য়ায়ের মতে, এই ধরনের প্রতারণার ফোনগুলো মূলত বিদেশ থেকে ফোন আসছে। এখানকারও কিছু লোক জড়িত, জড়িয়ে আছেন ব্য়াঙ্কের কর্মীদের কেউ কেউও। মানুষকে মনে রাখতে হবে, পুলিশ এভাবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে না। আর পুলিশ এরেস্ট করলেও ব্যাংক ডিটেলস চাইবে কেন বা টাকা চাইবে কেন? এটা মাথায় রাখা জরুরি। সাইবার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ,  এই ধরনের ভিডিও কল ধরাই উচিত নয়। যদি এমন ফোন আসে, ১৯০৩-এ ফোন করতে হবে। 


'যখন ব্য়াঙ্কে যেতাম তখন আমাকে ভিডিও কলে ওদের রাখতে বলত'


গড়িয়াহাটের দম্পতি জানায়, মোট তিন ধাপে টাকা আত্মসাৎ করা হয় তাঁদের থেকে। সম্প্রতি সেই অভিযোগ নিয়েই গড়িয়াহাট থানার দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।  এমনভাবেই ফাঁদে ফেলা হয় তাঁদের যে, ইউপিআই-এর মাধ্যমে, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভাঙিয়ে, টাকা দেন তাঁরা। অভিযোগকারীর দাবি, একেবারে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।   এখানেই শেষ নয়, প্রতারকদের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্য় দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী। সন্ধ্য়া রায় জানান, 'আমি যখন ব্য়াঙ্কে যেতাম তখন আমাকে ভিডিও কলে ওদের রাখতে বলত' 


ডিজিটাল অ্য়ারেস্ট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবধি সতর্ক করেছেন। সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্নভাবে প্রচার চলছে। কিন্তু, তার মধ্য়েও প্রতারণা চলছেই।