কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডের পর ডার্বি বাতিল ঘিরে চাপানউতোর চলছে। প্রতিবাদ ঠেকাতেই ম্যাচ বাতিল বলে অভিযোগ উঠছিল। সেই আবহেই বিধাননগর কমিশনারেটের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে ডার্বি বাতিলের কারণ জানানো হল। একটি অডিও রেকর্ডিং শেয়ার করে পুলিশের দাবি, একাধিক অডিও ক্লিপ তাদের হাতে এসেছে, যেখানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জমায়েত করে, হিংসা ছড়ানোর পরিকল্পনা করতে শোনা গিয়েছে। তাই ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। (Kolkata Derby Cancellation)


রবিবার সন্ধে ৭টা থেকে ডার্বি শুরু হওয়ার কথা ছিল, তার আগে শনিবার ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা করা হয়। সেই নিয়ে বিতর্ক বাধলে রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন বিধানগর কমিশনারেটের আধিকারিকরা। সাংবাদিক বৈঠকে দু'টি অডিও রেকর্ডিং শোনান তাঁরা, যার সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। ওই অডিও রেকর্ডিংয়ের কথোপকথন খানিকটা এমন-


কণ্ঠ ১- যত ছেলে, যখন হাতে অস্ত্র নেবে না! হাতে অস্ত্র মানে বুঝে নাও। তখন দেখবে এই যে পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে না! সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। ওরা লাঠি চালাবে, আমরা চালাব অস্ত্র। দেখি কার জয়....ঠিক আছে! অস্ত্র নিয়ে যেতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। 


বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, ডুরান্ড ডার্বিতে অশান্তির বাধানোর চক্রান্ত করা হচ্ছিল। দর্শকদের মধ্যে মিশে গিয়ে অশান্তির ছক করা হয়েছিল। এমন বেশ কয়েকটি অডিও ক্লিপ তাদের হাতে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত সেই নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। কমিশনারেটের আধিকারিকরা বলেন, "শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোনও সমস্যা নেই আমাদের। কিন্তু আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে যে, অশান্তি তৈরির চেষ্টা হবে। সেই কারণে জমায়েত না করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। যুবভারতী চত্বরে জারি করা হয়েছে ন্যায় সংহিতার ১৬২ ধারা (আগে যা ফৌজদারি বিধির ১৪৪ ধারা ছিল)।"(RG Kar Protests)



পুলিশ আধিকারিক বলেন, "সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে কিছু সংগঠন এবং লোকজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য আসে আমাদের কাছে। তাই ফুটবলপ্রেমী ৬২-৬৩ হাজার মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে পদক্ষেপ করতে হয় আমাদের। তাই বাতিল করতে হয় ম্যাচ। বহু মানুষ স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভ করতে আসছে বলে জেনেছি। কিন্তু আজও আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, আজও বিশৃঙ্খলার তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। অনেকেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে আসছেন, কিন্তু কিছু বিশৃঙ্খল লোকজন ঢুকতে চলেছেন তার মধ্যে। এমন বহু তথ্য হাতে এসেছে আমাদের। তদন্তের স্বার্থে সব প্রকাশ করতে পারছি না। পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে, রাকেশ পাল, শুভম চক্রবর্তী, রজত নন্দী, সাগ্নিক গুহ এবং অনীশ দত্ত। এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর কে কে যুক্ত রয়েছেন, জানার চেষ্টা করছি আমরা। আরও বেশ কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।" কিছু সংগঠন এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং আজ ডার্বি হলে হিংসা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল বলে দাবি পুলিশের।


আর জি কর কাণ্ডে তোলপাড়ের মধ্যেই বাতিল করা হয় আজকের ডার্বি। গ্যালারিতে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় ম্যাচ বাতিল করা হয়। 
পর্যাপ্ত পুলিশ পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানায় বিধাননগর কমিশনারেট, ডুরান্ড কমিটি। তবে ম্যাচ ভেস্তে গেলেও যুবভারতীর বাইরে প্রতিবাদে শামিল হবেন ইস্ট বেঙ্গল এবং মোহনবাগানের সমর্থকরা। সেই জমায়েত নিয়েও সতর্ক করেছে বিধাননগর কমিশনারেট। জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে বিধাননগর কমিশনারেটের বাইরে প্রচুর পুলিশের ভ্যান রয়েছে, রয়েছে RAF, একাধিক প্রিজন ভ্যান। যুবভারতীর ৩ নং গেটের সামনেই কমিশনারেটের দফতর। স্টেডিয়ামের ভিআইপি ফটকে জমায়েত করবেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকরা। কিন্তু ১৬৩ ধারা ভেঙে সেই জমায়েত বেআইনি হবে বলে জানিয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট।


অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সৌরীশ পালের দাবি, পুলিশের তরফে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তিনিও একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করেছেন, যাতে বিধাননগর সাউথ থানার অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদের জন্য জমায়েত করতে নিষেধ করতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। খেলা বাতিল হয়েছে যেখানে, জমায়েত করা যাবে না বলে জানানো হয়। জবাবে সৌরীশ জানান, পুলিশ আপত্তি করলেও, হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হবেন। 


আরও পড়ুন: RG Kar Update: 'দুর্ভাগ্যজনক...', আরজি কর কাণ্ডে দলের সাংসদের কোন দাবি নিয়ে তোপ কুণালের?