কলকাতা: কোথাও তিনি আজ 'অভয়া', কোথাও 'তিলোত্তমা', এই শহরের হাসপাতালে মধ্যরাতে ধর্ষণ-খুন হতে হয়েছে তাঁকে। সেই মৃত্যুই প্রশ্ন তুলেছে একাধিক। প্রশ্ন তুলেছে নারী সুরক্ষা, নারী নিরাপত্তা নিয়ে। 'বিচার চাই, বিচার চাই' স্লোগানে আজ গর্জে উঠেছে গোটা দেশ। শহরের হাসপাতালে হাসপাতালে চলছে চিকিৎসক-নার্সদের প্রতিবাদ। স্বাধীনতার মধ্যরাতে শহর থেকে জেলা- রাত 'অধিকার' করে দেখিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মহিলা। কিন্তু যে কোল খালি হয়েছে, যে ঘর আজ 'একা', সেই 'মেয়েহারা' পরিবার লড়াই করছে সেই মেয়ের জন্য। লক্ষ, লক্ষ মেয়ের জন্য। 


নারকীয় নৃশংসতার শিকার হয়েছে মেয়ে। ভেঙে পড়েছেন বাবা। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বারংবার কথা বলার সময় ভিজে গিয়েছে চোখের কোল, ধরে এসেছে গলা। কিন্তু ভাঙা মন নিয়েও আজ লড়াই করছেন 'সঠিক বিচারের' আশায়। পুলিশি তদন্তে 'আস্থা' না রেখে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই তদন্তেই কি আস্থা রাখছেন? 


নিহত চিকিৎসকের বাবার কথায়, 'কোথাও না কোথাও তো ভরসা রাখতেই হবে। দেশের অন্যতম তদন্ত সংস্থা সিবিআই। হাইকোর্টের নির্দেশে তারা এখন তদন্ত করছে। সেখানে আস্থা রাখছি। মনোবল শক্ত রেখে এই লড়াই করে চলেছি।'


এরই মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ছেয়ে গিয়েছে নানা ছবি, নানা ঘটনা। সে প্রসঙ্গে চিকিৎসকের বাবা বলেন, 'সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছে মেয়ে মারা গিয়েছে কীভাবে বাবা হয়ে এসব করছেন। আমার একটাই কথা, আমি যদি আজ না লড়াই করি মেয়েটা জাস্টিস পাবে কীভাবে? দেশবাসী আজ লড়াই করছে। আমার সেখানে শক্ত থাকাটা খুব দরকার।' 


মেয়ের 'এইভাবে' মৃত্যু মেনে নিতে পারে না মায়ের মন। মেয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই কেঁদে ফেললেন তিনি, আর্তি শুধু একটাই-'আমার মেয়ে যদি বিচার পায়, সেটাই আমার আত্মার শান্তি, আমার মেয়েটা শান্তি পাবে। কোনও মায়ের যেন আমার মতো কোল খালি না হয়। দেশবাসীর কাছে আমাদের অন্তর থেকে আস্থা আছে।' 


আরও পড়ুন, 'চিৎকার করে কাউকে বলে দেবে তাই খুন করেছি', ভয়াবহ নৃশংসতার পরও নির্বিকার, নিরুত্তাপ সঞ্জয়


তবে কথোপকথনের মধ্যেই একটি চাঞ্চল্যকর দাবিও করেছেন পরিবার। নিহত চিকিৎসকের পরিবারের কথায়, হাসপাতালে কাজ নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছিল। ওঁর যে সিনিয়র ছিল, যার তত্ত্বাবধানে ও কাজ করত, ওঁর সঙ্গে কাজ করতে আমার মেয়ের সমস্যা হত'। 


এদিকে, রাত দখলের কর্মসূচিতেই থেমে নেই প্রতিবাদ। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আজ মিছিল করলেন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়য়া-শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। নির্ভয়াকাণ্ডের পর এক দশক অতিক্রান্ত। কিন্তু আবারও এক ভয়ঙ্কর নৃশংসতা আমাদের বুঝিয়ে দিল হয়তো কোথাও কিছু বদলায়নি।


 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে