কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা : রামপুরহাটকাণ্ডের (Rampurhat Violence) প্রতিবাদ কলকাতায় (Kolkata)। মৌলালি যুব কেন্দ্র থেকে থেকে মিছিলে পা মেলালেন একাধিক বিশিষ্টরা (Eminent Persons)। যা যাবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত। 'এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ নয়' নবারুণ ভট্টাচার্যর লেখা প্রখ্যাত প্রতিবাদের লাইন লেখা বিশাল ফ্লেক্স সামনে রেখে মিছিলে মিছিলে পা মেলান পবিত্র সরকার, অম্বিকেশ মহাপাত্র, অনীক দত্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়রা। রাজনৈতিক পতাকা ছাড়াই পথে নেমেছেন দীপ্তিতা ধর, সৃজন ভট্টাচার্যরাও।


রামপুরহাট কাণ্ড নিয়ে এদিনই রাজ্যের থেকে তদন্তের ভার নিয়ে সিবিআইকে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যে প্রসঙ্গে পবিত্র সরকার জানান, 'সিবিআই তদন্তের ওপরও যে আমার সেভাবে আস্থা রয়েছে তেমনটা নয়। কিন্তু যেই তদন্ত করুক, অপরাধীরা যাতে ধরা পড়ে ও তারা যাতে চরম শাস্তি পায় এটাই আমাদের দাবি।'


রাজ্যে আগে একাধিক সময় অনেক বিশিষ্টদের পথে নামতে দেখা গেলেও রামপুরহাট কাণ্ডের পরে সেভাবে কাউকে পথে নামতে দেখা যায়নি, যে প্রসঙ্গে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেছেন, 'ক্ষমতার অলিন্দে থেকে নিজের সত্ত্বাকে অনেকেই বিকিয়ে দেন। সমস্যাটা সেখানেই। তবে আমার মনে হয় তাদেরও বিবেক দংশন ঠিক হবে, পরে তারাও নিশ্চয়ই মাঠে নেমে আমাদের সঙ্গে হাঁটবেন।'


আরও পড়ুন- বগটুইয়ের ছবি নিয়ে অপপ্রচার, সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে ইন্ধন, সতর্ক করল পুলিশ


কলকাতা হাইকোর্টে রায়


প্রসঙ্গত, রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্য আর কোনও তদন্ত করবে না। ধৃতদের সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে। নির্দেশ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের। ৭ এপ্রিলের মধ্যে সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ। রামপুরহাটকাণ্ডে বিচারের স্বার্থে, মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এই নির্দেশ, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। এর আগে শকিং ও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি, রামপুরহাটকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কংগ্রেস-সিপিএম ও বিজেপি। এদিন, সবকটি মামলার এক সঙ্গে শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। সব পক্ষই, নিরপেক্ষ কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি করে। 


সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর, এই মামলায় এদিন, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলে,যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, মর্মান্তিক ও ভয়াবহ। মঙ্গলবার, SIT গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত SIT’র তরফ থেকে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগ করা হয়, ঘটনাস্থল থানা থেকে অত্যন্ত কাছে হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ অগ্নিদগ্ধ হতে থাকা মানুষদের উদ্ধার করতে সময় মতো পৌঁছায়নি। মামলাকারীর আইনজীবীরা অভিযোগ করেন যে, যেভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। অভিযোগ ছিল কত মানুষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তা নিশ্চিত করার জন্য টাওয়ার ডাম্পিং টেকনোলজিও ব্যবহার করা হয়নি। নমুনা সংগ্রহের ভিডিওগ্রাফি করা এবং সাক্ষ্যগ্রহণ ও গোপন জবানবন্দি নেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে। মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নেওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নিয়ম মানা হয়নি বলেও অভিযোগ। অভিযোগ খতিয়ে দেখে আদালতের সিদ্ধান্ত, মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী যে  পদ্ধতিতে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি। ৭ এপ্রিল ফের এই মামলার শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে।