কলকাতা: রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র ই-মেলে ফরওয়ার্ড করেছিলেন। তার জেরে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আইনি টানাপোড়েন (Defamatory Cartoon Case)। আইন-কানুন, সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ আম-আদমি নন তিনি, এখানে হয়রানির শিকার মানুষটি সমাজের শিক্ষিত-অভিজাত শ্রেণির মধ্যে পড়েন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র (Ambikesh Mahapatra )। এত বছর পর অব্যাহতি পেয়ে তিনি কলম ধরলেন সমাজমাধ্যমে। জানালেন, রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে নাগরিক অধিকার রক্ষার পক্ষে তাঁর লড়াই অব্যাহত থাকবে।
দীর্ঘ ১১ বছর ধরে লড়াইয়ের পর অব্যাহতি পেলেন অম্বিকেশ
শুক্রবার কার্টুনকাণ্ডের মামলা থেকে অব্য়াহতি পেয়েছেন অম্বিকেশ। তার পর গতকালই সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন তিনি। রাতে ফের ফেসবুকে দীর্ঘ লেখা পোস্ট করেন অম্বিকেশ। তাতে লেখেন, ‘সংবিধান দিবসকে গণতন্ত্র দিবস বলা হয়। অর্থাৎ ভারতীয় সংবিধানের মর্মবস্তু গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক অধিকার সমূহের মধ্যে পড়ে ভিন্ন মত প্রকাশের অধিকার। ২০১১ সালে ‘মা-মাটি-মানুষের’ সরকার সংবিধানের নামে শপথ গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সরকার এবং শাসকদলের সমালোচনামূলক কোনও স্বাধীন মতপ্রকাশ করতে দেওয়া হবে না। সেই পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয় পুলিশ, প্রশাসন, শাসদকদল এবং তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের’।
গত ১১ বছরে প্রাণনাশের হুমকি থেকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বলেও জানান অম্বিকেশ। তিনি লেখেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে পরিকল্পনা, কলকাতা পুলিশ, শাসকদল, দুষ্কৃতীবাহিনীর রাতের আঁধারে অপারেশন। শারীরিক নিগ্রহ, প্রাণনাশের হুমকি, মুচলেকা, পুলিশ ডেকে নির্দেশ দিয়ে গ্রেফতার করানো, থানার লকআপে রাত্রিযাপনের বন্দোবস্ত, আলিপুর ক্রিমিনাল কোর্টে মামলা, চার্জশিট, মামলাকে নানা অছিলায় বিলম্বিত করা, ধারাবিহীন মামলাকে জিইয়ে রাখার কিম্ভূত কিমাকার নির্দেশ...তার সঙ্গে উপরি হেনস্থা, হয়রানি, আদালতের চক্কর। এই ভাবে প্রায় ১১ বছর'!
গণতন্ত্রের জয়, বললেন অম্বিকেশ
আরও পড়ুন: Ambikesh Mahapatra : ১১ বছর পর কার্টুনকাণ্ডে অবশেষে অব্যাহতি অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রর
মামলা থেকে নিষ্কৃতী পাওয়াকে গণতন্ত্রের জয় বলে উল্লেখ করেছেন অম্বিকেশ। তাঁর কথায়, 'এই জয় রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত, ফাঁসের বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে গণতন্ত্র তথা নাগরিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের জয়...এই লড়াইয়ে গত ১১ বছরে বহু মানুষ প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে চেনা, অনেকে আবার অচেনা'। একসঙ্গে লকআপে রাত কাটানো, তৎকালীন সহ অভিযুক্ত সুব্রত সেন বেঁচে নেই। মামলা থেকে নিষ্কৃতী পেয়ে তাঁকেও স্মরণ করেছেন অম্বিকেশ। শ্রদ্ধার্ঘ্য় জানিয়েছেন মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার, অশোক মিত্র, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, হাসিম আব্দুল হালিম, তরুণ সান্যাল, বুদ্ধদেব গুহ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ওয়াসিম কপূর, নবনীতা দেবসেন, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়, শ্যামল চক্রবর্তী, ইলিনা সেন, বরুণ দে, সুনন্দ সান্যালদের।