শিবাশিস মৌলিক ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা : কেউ লক্ষ্মী সাজলেন। কারও কারও হাতে লক্ষ্মী প্রতিমা। কেউ সাদা কাগজকে পুজো করলেন অদৃশ্য লক্ষ্মী রূপে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi Puja) দিনে এভাবেই নিয়োগের দাবিতে প্রতিবাদে সামিল হলেন এসএসসি (SSC) থেকে গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীরা। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজাও চলল জোরদার।


‘লক্ষ্মী’ সেজে আন্দোলন-


হাতে লক্ষ্মী প্রতিমা। কিন্তু চোখে জল ! মনে মনে প্রার্থনা, এবার অন্তত চাকরিটা হোক। লক্ষ্মী-লাভের আশায় বাংলায় ঘরে ঘরে যখন কোজাগরী পূর্ণিমায় কাঁসর-ঘণ্টা-মন্ত্রোচ্চারণ, তখন এসএসসির চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনমঞ্চে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ! মেয়ো রোডে ৫৭৪ দিন ধরে চলছে এসএসসির চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন। কিন্তু, হকের চাকরির দাবিতে এভাবে আর কতদিন ?


আন্দোলনকারী এক এসএসসি চাকরিপ্রার্থী বলেন, ভেবেছিলাম অন্তত এই বছরের লক্ষ্মীপুজোটা অন্তত পরিবারের সাথে কাটাব। 


দুর্গাপুজোর কার্নিভালের জন্য পুলিশের নির্দেশে শনিবার আন্দোলনে বসতে পারেননি এসএসসি, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। 
রাজ্য সরকারি গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীরা ধর্নায় বসতে গেলেও তুলে দেয় পুলিশ। অভিযোগ, আন্দোলনকে আড়াল করতে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির উল্টোদিকে টাঙানো হয় ২৫ ফুটের সাদা কাপড়। যদিও রবিবার লক্ষ্মীপুজোর সকালে দেখা যায় অন্য ছবি। কোথাও লক্ষ্মী সেজে ধর্নামঞ্চে অভিনব প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেল চাকরিপ্রার্থীদের। সাজা কাগজে মালা চড়িয়েই অদৃশ্য লক্ষ্মীর পুজো করে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান রাজ্য সরকারি গ্রুপ ডি চাকরি প্রার্থীরা। গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি চাকরি প্রার্থীদের মঞ্চে আবার কবিগানে প্রতিবাদ।


মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে, ২০১৪-র প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান মঞ্চে একজনকে লক্ষ্মী সাজিয়ে পুজো করেন আন্দোলনকারীরা। মৌটুসি বিশ্বাস নামে ২০১৪-র প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী বলেন, "দুর্গাপুজো আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে। আজ লক্ষ্মীপুজোর দিনেও আমরা বাইরে ধর্নামঞ্চে পড়ে আছি। আমাদের কিছু করার নেই। যতক্ষণ না আমাদের দাবি না মানা হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা ধর্নামঞ্চ থেকে উঠব না।" 


একই ভাবে আপার প্রাইমারি অবস্থান মঞ্চেও এক কর্মপ্রার্থীকে লক্ষ্মী সাজিয়ে অভিনব প্রতিবাদে সামিল হন আন্দোলনকারীরা। চাকরিপ্রার্থীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তার কোনওটায় লেখা, অনশনে বঞ্চিতা লক্ষ্মীর পাঁচালি। কোনওটায় লেখা, ৮ বছরের বঞ্চিতা লক্ষ্মী রাস্তায় অনশনে।


আন্দোলনকারী আপার প্রাইমারির এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি পালন করুন। আমাদের নিয়োগ দিন। আগামীতে যদি আমরা নিয়োগ না পাই, আমরণ অনশনের ডাক দেব। স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করব।


কিন্তু, উৎসবের দিনগুলিতেও যাঁরা হকের চাকরির দাবিতে আন্দোলন করলেন, সেই চাকরি প্রার্থীদের আকুতির সঙ্গে একমত নন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, চাকরি উৎসবের চেয়ে জরুরি নয়, উৎসবে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইনভল্ভড আছে। কয়েকজন লোক রাস্তায় বসে আছেন, আন্দোলন করছেন, সে তাঁদের দাবি আছে, তাঁরা করতেই পারেন। কিন্তু সেটা এত লোকের উৎসবের থেকে....বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে, এটা হতে পারে না।


যথারীতি এই ইস্যুতে রাজ্যের শাসকদলের চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, এই সরকার খেলা, মেলা, লীলা ছাড়া কিছু করতে পারে না। দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকুন। খান, দান-মস্তি করুন। সরকারি টাকাকে এভাবে উৎসব করে ফুটিয়ে মাতিয়ে রাখা, এই সরকারে পলিসি।


অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, উৎসবের সঙ্গে কোটি কোটি মানুষ জড়িত। লক্ষ লক্ষ পরিবার অর্থনৈতিকভাবে নির্ভর করে। তাদের আয় বাড়ে এই সময়টায়। 


কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনেও চাকরি প্রার্থীরা এভাবেই আন্দোলনে সামিল হলেন...হাজার দুঃখ, কষ্ট সহ্য করেও, উৎসবের আনন্দকে দূরে সরিয়ে, তাঁদের দাঁতে দাঁত চাপা এই লড়াই অব্যাহত। 


আরও পড়ুন ; কবে মিলবে হকের চাকরি? কোজাগরী পূর্ণিমায় ধনদেবীর আরাধনায় চাকরিপ্রার্থীরা