সন্দীপ সরকার, কলকাতা: চিকিৎসক মাত্র ২ জন। অপারেশন করার পাশাপাশি তাঁদেরই সামলাতে হয় আউটডোর। ধুঁকছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগ। সমস্যায় রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। চিকিৎসক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্যভবনের কাছে আবেদন করেছে কর্তৃপক্ষ। ভয়ঙ্কর করোনা আবহে বাড়ির ছোটদের নিয়েও যখন সবার দুশ্চিন্তা, তখন উদ্বেগের এক অন্য ছবি ধরা পড়ল খাস কলকাতায়। ১৯৪৬ সালে, ভারতের প্রথম পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগ চালু হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। 


কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে হাজার হাজার শিশুর ভরসা এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। অবসর, বদলি-সহ বিভিন্ন কারণে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে কমতে কমতে চিকিৎসকের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ২-এ। তাঁদের মধ্যে একজন বিভাগীয় প্রধান এবং অন্যজন রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার (RMO)। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দু’জনকেই আউটডোরে বসতে হয়, সেই সঙ্গে করতে হয় অপারেশন। যেখানে একসময় ৬ দিন আউটডোর খোলা থাকত, সেখানে এখন খেলা থাকে ২ দিন। এক  অসুস্থ শিশুর বাবা গোপাল রায় বলেন, এখন তো সোমবার ও বৃহস্পতিবার আউটডোর খোলে। আবার বৃহস্পতিবার আসতে হবে। 


রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝে তো একজন চিকিৎসক আউটডোরে থাকলে, অপারেশন করার কেউ থাকে না। রোগীর আত্মীয় প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, "ডাক্তাররা বিরক্ত হয়ে পড়ছেন। ৫ জনের জায়গায় দুজন আছেন। একজনের জায়গায়২ জন আছে, একজনই আউটডোরে যাচ্ছেন, তিনিই অপারেশন করছেন।" 


একেই গোটা বিভাগের ভরসা দু’জন চিকিৎসক, তার মধ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন একজন। যার ফলে জানুয়ারির প্রথম দিকে রোগী ভর্তিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে। গত সোমবার থেকে ফের চালু হয়েছে রোগী ভর্তি নেওয়া। কিন্তু অপারেশনের ডেট কবে পাবেন, তা জানেন না হাসপাতালে আসা বহু শিশুর অভিভাবকরাই। 


শিশুর বাবা শেখ নাজিবুল বলেন, "ডিসেম্বর মাসে প্রথমে নিয়ে এসেছিলাম। ৩-৪বার এলাম, আবার টেস্ট করতে লিখে দিয়েছে, আবার আসতে বলেছে। বাচ্চা ভর্তি হতে পারল না।" শুধু চিকিৎসা পরিষেবা নয়। শিক্ষা-পরিকাঠামোর দিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই বিভাগ। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বা NMC-র নিয়ম অনুযায়ী, কোনও হাসপাতালে মাস্টার অফ সার্জারি (MCh) পড়ানোর জন্য কমপক্ষে ৩ জন শিক্ষক চিকিৎসক থাকা দরকার। 


যেখানে, কলকাতা মেডিক্যালের এই বিভাগে রয়েছেন ১ জন। ফলে দ্রুত অন্তত ২ জন শিক্ষক চিকিৎসক নিয়োগ না করলে, মাস্টার অফ সার্জারি পড়ানোর অধিকার হারাতে পারে এই বিভাগ। এ বিষয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল জানিয়েছেন, সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্যভবনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অনেক বিভাগেই চিকিৎসক কম। তাই চিকিৎসক নিয়োগের আবেদন জানানো হয়েছে।