কলকাতা: পুরসভার ভিতরে তৃণমূল (TMC) এবং বিজেপি (BJP) কাউন্সিলরদের মধ্যে হাতাহাতি। শনিবার এমনই বেনজির দৃশ্যের সাক্ষী হলেন শহর কলকাতার নাগরিকাররা। সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে। বিজেপি-র বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে শাসকদল তৃণমূল। অন্য দিকে বিজেপি-র দাবি, বিরোধীদের দমিয়ে রাখতেই পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়েছে। (Kolkata Municipal Corporation)


শনিবার কার্যতই কুস্তির আখড়া হয়ে উঠল কলকাতা পুরসভা। মেয়র এবং চেয়ারপার্সনের সামনেই অধিবেশন চলাকালীন হাতাহাতি, ধস্তাধস্তিতে জড়ালেন তৃণমূল এবং বিজেপি কাউন্সিলররা। আঙুল উঁচিয়ে শাসানিও দিতে দেখা যায় পরস্পরকে। এই ঘটনায়, বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ এবং তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসুকে শোকজও করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, তা নিয়ে দু'রকমের দাবি উঠে এসেছে। 


এদিনের ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। স্কুলের বাচ্চাদের জামা-কাপড়, রেনকোট কেনায় দুর্নীতির নিয়ে সরব হওয়াতেই এই হামলা বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, "এরকম ভাবে হামলা হলে বিরোধীরা মুখ খুলবেন কী করে? এই চেয়ারে নেতাজি বসেছিলেন। এই চেয়ারে বসেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন।আজ নারদকাণ্ডের আসামিরা চেয়ারে বসে রয়েছেন। তাই যা হওয়ার হয়েছে। আজ একটি মাত্র প্রস্তাব ছিল, সেটিও আগের হাউসের। তা নিয়ে যাতে বলতে না পারি, পরিকল্পনা করে এই হামলা চালানো হয়েছে। প্রতি মাসে যদি এভাবে হামলা হয়, কী করে কথা বলবেন বিরোধীরা।"


আরও পড়ুন: Kolkata Municipality: কলকাতা পুরসভায় ধুন্ধুমার, বিজেপি-তৃণমূল কাউন্সিলরদের মারামারিতে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি


সজল আরও বলেন, "মেয়র বলছিলেন, বিরোধীরা কই। আমি বললাম, আপনাকেই মাঝে মাঝে বিরোধী বলে মনে হয়। তাতে ওরা টেবিল বাজাতে শুরু করল। আমি বললাম, এটাই কি সংস্কৃতি? তাতে অসীম বসু, যিনি আগে বিজেপি করতেন, এখন নতুন তৃণমূল...নিজেকে প্রমাণ ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সঙ্গে অশ্লীল গালাগালি। আমার নিরাপত্তারক্ষীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, অথচ মেয়রের নিরাপত্তারক্ষীরা হাউসের মধ্যে ধুকে পড়েন। কলার ধরে টানছে, ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে, গণতন্ত্র কোথায়?"


যদিও অসীমের অভিযোগ, চোর চোর বলে বিজেপি-ই পরিস্থিতি তাতিয়ে তোলে। তাঁর বক্তব্য, "আমরা কখনওই মারমুখী নই। সকলকে চোর বলছেন, উনি সাধু! সকলে মিলে ওঁকে মেরেছেন, আর উনি সুস্থ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? এভাবে যদি হাউসে আমাদের চোর বলেন, আবারও এমনই প্রতিক্রিয়া জানাব।"


এদিন ঘটনার সূত্রপাত, তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দের একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে।  যার পর বিজেপি কাউন্সিলর সজল এবং বিজয় ওঝার সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়ান ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসু। বাদানুবাদের মধ্যেই, হঠাৎই সজলকে ধাক্কা দেন তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসু। এর পরই পাশ থেকে এগিয়ে আসেন বিজেপি কাউন্সিলর বিজয়। তাঁর সঙ্গেও ধাক্কাধাক্কি বেধে যায় তৃণমূল কাউন্সিলর অসীমের।


তখনই, এগিয়ে আসেন সুদীপ পোল্লে-সহ কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর। তৃণমূল এবং বিজেপি কাউন্সিলরদের মধ্য়ে কার্যত মারামারি শুরু হয়ে যায়।
একে অপরকে গলা ধাক্কা, জাপটে ধরে মারধর, বাদ যায়নি কিছুই। অধিবেশন কক্ষে মারপিট থামাতে নেমে আসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু দু'পক্ষকে নিরস্ত করতে কার্যত হিমশিম থেকে হয় তাঁকে। ধস্তাধস্তির মধ্যে কলকাতা পুরসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন চেয়ারপার্সন মালা রায়।  সজল এবং অসীমকে শোকজ করা হয়েছে।