কলকাতা: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটা খেতে হল রোগীর পরিবারকে। খাস কলকাতায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে (national medical college) এমনই ঘটনা ঘটল সোমবার। শুধু পুলিশকর্মীই নন, লাঠি হাতে রোগীর পরিবারের উপর চড়াও হতে দেখা গিয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারকেও। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে। একজন সিভিক ভলান্টিয়ার কীভাবে হাতে লাঠি নেন, সেই লাঠি দিয়ে কারও উপর চড়াও হতে পারেন- সেই প্রশ্নই তুলছেন অনেকে। 


পুলিশেরই সার্কুলার অনুযায়ী, একজন সিভিক ভলান্টিয়ার ঠিক কী কী কাজ করতে পারেন তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেখানে কী কী বলা রয়েছে?


গতবছরের মার্চেই রাজ্য পুলিশ সার্কুলার জারি করেছিল। সেখানে সিভিক ভলান্টিয়ারের (civic volunteer) ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আইন শৃঙ্খলাজনিত দায়িত্বপূর্ণ কাজ সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেওয়া যাবে না। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। বিভিন্ন উৎসবে ভিড় সামলাতে, বেআইনি পার্কিং রুখতে, সাহায্যের ভূমিকা নেবে সিভিক ভলান্টিয়ার। সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে পুলিশের সাহায্যকারীর ভূমিকায় থাকবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। বারবার সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। সেই কারণেই কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) নির্দেশ মেনে সার্কুলার জারি করে রাজ্য পুলিশ।


বারবার বিতর্কে:
এর আগে হাওড়ার আনিস খানের মৃত্যু থেকে গল্ফগ্রিনে মারধরের জেরে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ- কাঠগড়ায় ছিল সিভিক ভলান্টিয়ার। কখনও পিকআপ ভ্যানের চালককে মারধর করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ, কখনও আবার বালির ট্রাক আটকে তোলাবাজির অভিযোগ। কখনও এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ, কখনও স্রেফ দাদাগিরি-জুলুম। নানা সময় নানা অভিযোগে নাম জড়িয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। গত বছরের জানুয়ারিতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে সিভিক ভলান্টিয়ারের দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছিল। পরিচয় জিজ্ঞাসা করা নিয়ে বচসার জেরে এক ব্য়ক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। রাতে স্থানীয় জয়কৃষ্ণপুর বাজার থেকে চপ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন শিবু বাগদি নামে এক ব্য়ক্তি। অভিযোগ অফ ডিউটিতে থাকা সুব্রত নন্দী নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁর পরিচয় জানতে চান। তা নিয়ে দু'পক্ষের বচসা বাধে। সেই সময় শিবু বাগদিকে ব্য়াপক মারধর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ২০২১ সালেও একটি ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ারের। রাজকুমার শর্মা নামে এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সরশুনা থানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, পুলিশ সঙ্গে গেলেও ১ জন সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন আগে বাঁকুড়া জেলাপুলিশের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের সিভিক ভলান্টিয়াররা পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে রাজ্য সরকার পিছু হঠে এই সিদ্ধান্ত থেকে। 


বারবার সিভিক ভলান্টিয়ার-বিতর্ক ফের উঠে এল এদিনের ন্যাশনাল মেডিক্য়াল কলেজের ঘটনায়। রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তার জন্য কী লাঠিচার্জ করতে পারে পুলিশ? সেই কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে? উঠছে এই প্রশ্নও। এই ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্য ভবন, তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল।  সূত্রের খবর, সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে লালবাজার।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: 'রাজ্যে এখন ৩৫৫ ধারা জারির সঠিক সময়...সুপারিশ করুন রাজ্যপাল', দাবি শুভেন্দুর