ঝিলম করঞ্জাই, সন্দীপ সরকার, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : গা শিউরে ওঠা ঘটনা। ছাত্রাবাসে এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল খাস কলকাতায় । মোবাইল চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হল এক যুবককে। মোবাইল চোর সন্দেহে দেওয়া গল গণধোলাই।
বেলগাছিয়ার জে কে ঘোষ রোডের বাসিন্দা ইরশাদ। কাজ করতেন চাঁদনি চকের একটি টেলিভিশন সারাইয়ের দোকানে। শুক্রবার সকালে বউবাজারের নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। এই রাস্তাতেই রয়েছে সরকারি ছাত্রাবাস, উদয়ন হস্টেল। অভিযোগ, সেই সময়ই তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে হস্টেলের ভিতরে নিয়ে যায় আবাসিকরা। হস্টেলের গেট বন্ধ করে, ভিতরের রুমে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ইরশাদ আলমকে। মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় গুরুতর জখম ইরশাদের।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। হস্টেলে পৌঁছেও প্রায় আধঘণ্টা ভিতরেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি পুলিশকে। অবশেষে গুরুতর জখম অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হল যুবকের। এই ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে মুচিপাড়া থানা। মৃত যুবকের প্রতিবেশীর দাবি, ' চাঁদনি টিভি সারানোর দোকানে কাজ করে। আজকে কাজে যায়নি। ফোন করে বলে কয়েকজন মারধর করেছে। আমাকে বাঁচাও'
পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায় ইরশাদের। দুই হাতেই গভীর ক্ষত রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমাট বেঁধেছে রক্ত। পা ছিল ভাঙা, ক্ষত ছিল কব্জিতেও। আবাসিকদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার হস্টেল থেকে চুরি যায় একটি মোবাইল ফোন। মুচিপাড়া থানায় মোবাইল চুরির অভিযোগ জানান এক আবাসিক। কিন্তু তাই বলে, ইরশাদকে মারধর করা হল কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্তরা জানায়, বৃহস্পতিবার, পাশেই একটি কেকের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে হস্টেল থেকে এক যুবককে বেরোতে দেখা যায়।
শুক্রবার ইরশাদকে দেখে তাঁদের মনে হয় সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখতে পাওয়া ব্য়ক্তিই ইরশাদ। তখনই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হস্টেলের ভিতর। অভিযুক্তদের আরও দাবি, মোবাইল চুরি করার কথা স্বীকার করেন ইরশাদ। জানায়, ১ হাজার টাকায় ফোনটি চাঁদনি চকে বেচে দিয়েছেন তিনি। আবাসিকরা তখন তাঁকে সেই ফোন এনে দেওয়ার কথা বলেন। ইরশাদ জানান, সেটা আর সম্ভব নয়। তখনই শুরু হয় বেধড়ক মার।
হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৬টি ব্যাট ও ১ টি লাঠি। তার মধ্যে ১ টি ব্যাট ২ টুকরো হয়ে গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, এই ব্যাট দিয়েই মারধর করা হয় ইরশাদকে। শুক্রবার ঘটনাস্থলে যান ডিসি সেন্ট্রাল।। আশপাশের দোকানগুলি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ। কিন্তু, নির্দিষ্ট ওই কেকের দোকানের সিসি ক্যামেরায় কারসাজি করা হয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। কারণ, ওই ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না।