কলকাতা: মঙ্গলেও কাটল না মেডিক্যাল জট ! ৬ দিনে পড়ল, কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজে (Calcutta Medical College ) পড়ুয়াদের অনশন আন্দোলন। নির্বাচনের দাবিতে এদিন, ধর্মতলা (Dharmatala) পর্যন্ত মিছিল করেন, মেডিক্য়ালের পড়ুয়ারা। এদিন স্বাস্থ্য ভবনে এনিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, তা হল না। তবে, মঙ্গলবার, মেডিক্য়াল কলেজ থেকে ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউজ পর্যন্ত মিছিল করেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।
ছাত্র সংসদের নির্বাচন-সহ ৩ দফা দাবিতে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন কর্মসূচি শুরু করেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ৫ পড়ুয়া। এরইমধ্যে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনশনরত পড়ুয়ারা। সোমবার, ঋতম মুখোপাধ্যায় নামে অনশনরত এক পড়ুয়াকে ভর্তি করতে হয়, হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি ব্লকের সিসিইউতে। সোমবার থেকে নতুন করে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন আরও ২ পড়ুয়া। প্রসঙ্গত, ২২ ডিসেম্বর ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে, আন্দোলন জারি রেখেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল। তাঁদের সামনেই ওঠে স্লোগান ওঠে, ' শেম শেম, ছাত্র মেরে ছাত্র প্রেম, কলেজ কর্তৃপক্ষ শেম শেম' । এমনকী অনশনস্থলের কাছে লাগানো সিসি ক্যামেরা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন আন্দোলনকারীরা। অনিকেত কর নামে এই আন্দোলনকারী পড়ুয়া বলেন, ' আমরা কলেজ কাউন্সিল মানি না। কারণ ছাত্র প্রতিনিধি নেই। আমরা অস্থায়ী স্টুডেন্ট বডি মানি না। আমরা নির্বাচন চাই, আমরা আন্দোলন করছি, রোগী পরিজনদেরও সমস্যা হয়, চিকিৎসার সমস্যা আছে, সব কিছু নিয়ে সরব হব। আমাদের প্রাইভেসি থাকবে না, তাই সিসি ক্যামেরা ঢেকে দিয়েছি।'
ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে পড়ুয়াদের একাংশের আন্দোলনকে ঘিরে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্ত। চিকিৎসক পড়ুয়াদের একাংশের হাতে ঘেরাও হন কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ-সহ একাধিক বিভাগীয় প্রধান। আন্দোলনের জেরে হাসপাতালের পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে! এই পরিস্থিতিতে বুধবার, দুপুরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল আন্দোলনরত পড়ুয়াদের। কিন্তু দেখা যায়, সেই সময় তালাবন্ধ অধ্যক্ষের চেম্বার।
আরও পড়ুন, 'মামলা ধামাচাপা দিতে ৫০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল সিবিআই', বিস্ফোরক দাবি লালনের স্ত্রীর
অন্যদিকে, চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে এই অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন শিশুপুত্রের চিকিৎসার জন্য বিহার থেকে আসা এক বক্তি। তাঁর আইনজীবী সুমন সেনগুপ্তর অভিযোগ, হাসপাতালে অচলাবস্থার জন্য তাঁর শিশুপুত্রের কিডনির অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। ছাত্র বিক্ষোভের জেরে সেন্ট্রাল ল্যাব থেকে শুরু করে একাধিক গুরুত্বপূর্ন বিভাগ বন্ধ, বলে জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আইনজীবী সোমবুদ্ধ দত্ত। যদিও ছাত্রদের আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, কোনও কাজে বাধা দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দপ্তর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতি বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যর নির্দেশ, নিশ্চিত করতে হবে যেন অস্ত্রোপচার নির্বিঘ্নে হয়। বিচারপতি বলেন, শুক্রবার বিকেল ৫ টার মধ্যে যেন গোটা প্রক্রিয়া যেন নির্বিঘ্নে হয়। আমি চাই, এটা সবার ক্ষেত্রে কার্যকর হোক। কিন্তু, যেহেতু এটা জনস্বার্থ মামলা নয়, তাই আমি নির্দেশ হিসাবে দিতে পারি না। তবে এসবের মধ্যেও স্বস্তির খবর হল, চিকিৎসা পেতে যে শিশুর বাবা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, এদিন সেই শিশুর কিডনির অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাকে দেখেও আসেন হাসপাতালের কর্তারা। এরপরই, তিন দফা দাবিতে নতুন করে, অনশন কর্মসূচির ডাক দেন পড়ুয়ারা।